পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুঃখের আর এক ব্যাপক মূর্ত্তি আছে। কিন্তু সে রূপ দেখা সকলের সাধ্যায়ত নেহে। আত্মপর ভেদ না ভুলিলে তাহার কল্পনাও হইবে না। সাধনা বলে যাহারা লোকাতীত দৃষ্টির সাহায্যে সেই বিরাট দুঃখের বিরাট চিত্র প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেনআমরা অযোগ্য হইলেও আমাদের জন্য তাহারা অবিনশ্বর তুলিকায় যে চিত্র অ্যাকিয়া গিয়াছেন। আইস দেখি সে ছবি কেমন ? সে এক অপূর্ব্ব নারীমূর্ত্তি-সাধক তঁহাকে ধ্যানে দেখিয়াছিলেন । ত্রিভুবনের যাবতীয় সুন্দর বস্তু হইতে যেমন তিল তিল সৌন্দর্য্য আহরণ করিয়া দেব সুন্দরী তিলোত্তমার সৃষ্টি-সে নারীরাও তেমনি পাদনখর হইতে কেশাগ্র পর্য্যন্ত দুঃখে গড়া-তার বেদনার চরণ, বেদনাময় করি, ব্যথা ভরা ব্রহ্মাওজোড়া বুক । সাধক তঁহাকে ভাবের ঘোরে অনন্ত পুৱাইয়া অনন্ত মাতাইয়া মা বলিয়া ডাকেন। বিশ্বের দুঃখে দ্রবময়ী সে মায়ের আলুলায়িত কেশ, বিগলিত বেশ-ভঁর অঙ্গে অঙ্গে, তিলে তিলে নয়, পুঞ্জে পুঞ্জে রাশিতে রাশিতে সমুদয় জগতের সমগ্র বেদনার একত্র সমাবেশ। তাই তিনি মসিবর্ণ-সাধকের বড় সাধের কাল মেয়ে কালী । সাধক তঁহাকে ব্রহ্মলোকে পান নাই-গোলোকে দেখেন নাই।--দেখিয়াছিলেন দুঃখের লীলানিকেতন শ্মশানে-দুঃখের সঙ্গিনী ভূতযোগিনীর সনে । যখন মনে হয় সব ফুৱাইল-মুষ্টিমেয় ভস্ম এবং কয়েক খণ্ড অস্থিমাত্র অবশেষ রাখিয়া-আশা-আকাজক্ষার আধার জীব শূন্যে লীন হইল-তখন সাধক দেখেন সেই উপেক্ষিত অস্থি-সেই অনাদৃত ভস্ম একজন অতি সমাদরে সংগ্রহ করিতেছেন - শ্মশানের ধুলিতে তার রাঙা পা ধুসারিত। সেই অস্থির হাড় গাঁথিয়া তিনি বক্ষে ধারণ করেন-সেই ভস্ম সর্ব্বাঙ্গে মাখিয়া তিনি অন্তরের জালা জুড়ান। এত ধার মমতা তার জীবন নাকি আবার লোপ পায় ! মায়ের অঙ্কে উঠিয়া দুঃখের কি অপরূপ রূপ ফুটিয়াছে বল দেখি ! এ দুঃখ যদি পতিতপাবন না হয়-তবে পতিতপাবন কাহাকে বলে জানি না। ইহাই তন্ত্রকারের ধ্যানলব্ধ দুঃখের প্রতিমা। এই দুঃখরূপিণীকেই তিনি অজা, অসংখ্য প্রজার জননী এবং ব্রহ্মাণ্ড প্রসবিনী বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । ইহা শুধু কবিকল্পনা নহে-এ নির্দেশের গুরুত্ব যে কত তাহার ইয়াত্তা করা যায় না। কর্ম্মবাদীর নিকট শুনিয়া থাকিবে বিশ্বের কর্ম্মেই উৎপত্তি-কর্ম্মেই স্থিতি-কর্ম্মেই লয়-অনাদি কর্ম্মপ্রবাহ অনন্তকাল প্রবাহিত। বিশ্ব তাহাতেই একবার উঠিতেছে একবার ডুবিতেছে। সাংখ্যকারীও বুঝাইয়াছেন-সমস্তই প্রকৃতিৰ কার্য্য অণু হইতে মহৎ পর্য্যন্ত সবই এক অব্যক্তের বিকার-তিনিই ভোগ-মোক্ষ-বিধায়িনী। আবার বিবর্ত্তবাদী বৈদ্যাস্তিকের মুখে শুনি : “জগচ্চিত্রং স্বচৈতন্তে পটে চিত্রমিবাপিতং মায়য়া”-জগৎ মায়ার লীলা, ঐন্দ্রজালিকের ইন্দ্রজালবৎ এক অনির্বাচ্য বস্তর খেলমাত্র। তাজিক-সাধক ঠার