পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জননী মূর্ত্তিতে দুঃখের আকারে এই বেদান্তের মায়া, সাংখ্যের প্রকৃতি কর্ম্মবাদীর কর্ম্মের, পূর্ণরূপ প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন। তাই তিনি তঁর সেই ব্যথাময়ীকেই ব্রহ্মের অঙ্কশোভিনী আনন্দময়ী বলিয়া অৰ্চনা করেন । বান্তবিক সমগ্র তন্ত্রই জীবনিস্তারার্থ এই মায়ের অলৌকিক উৎকণ্ঠায় পূর্ণ। তন্ত্রের যে স্থান ইচ্ছা খোল দেখিবো-মা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করিতেছেন বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই, ছেদ নাই। বিষ্ণুপাদ্যোস্তৃতা সুরধুনীর ন্যায়। তন্ত্রকে মাতৃহৃদরোল সমবেদনার এক নিরবচ্ছিন্ন ধারা বলিলেও হয়। জীবের জন্য এত ব্যাকুলতা এত সহানুভূতি এত ভাবনা আর কোথাও মিলে কিনা সন্দেহ।--মিলিবার কথাও নয়। মহেশ্বরী প্রশ্ন করিতেছেন উত্তর দিতেছেন স্বয়ং সদাশিব। এই প্রশ্নোত্তর প্রসঙ্গে মহেশ্বর একস্থলে বলিয়াছেন :

  • কৃতে বিশ্বতিতে দেবি বিশ্বেশীঃ পরমেশ্বরি । প্রীতে ভবতি বিশ্বাত্মা যত্যে বিশ্বং তদাশ্রিতম ৷” *সাধিয়া বিশ্বের হি"ত তোষ বিশ্বাত্মায়’-হিতের দ্বারা আহিতের অৰ্চনা করিতে হয়-সুখের উপচারে দুঃখের পূজা করিতে হয়-মঙ্গলের দ্বারা অমঙ্গলের সেবা করিতে হয় ; সর্বমঙ্গল যে মঙ্গলামঙ্গল উভয়েরই জননী, কোনটাই ত তাহার উপেক্ষণীয় নয়। যতদিন দ্বৈতবোধ, ততদিন “এ আমি হাসে কঁাদে ভাবে কত নানা ছাদে।” ততদিন মঙ্গলামঙ্গলের বিরোধ ঘটাইও না । একের অভাব অন্যের দ্বারা পূরণ করিতে ভুলিও না । দ্বৈত জগতে দুঃখ সুখকে খোজে-অমঙ্গল মঙ্গলকে চায়-অহিত। হিতের জন্য ব্যাকুল। সাধক বুঝিয়াছিলেন,

মা বাসনা বিহগীবশে, আসে যায় হৃদাকাশে সুখ দুঃখ দুই পক্ষ করিয়া বিস্তারতাই তিনি কাহাকেও উপেক্ষা করেন না, কাহাকেও অনাদর-করেননি । সাধনমাগে চলিতে আরম্ভ করা-আরও কত সংবাদ পাইবে । সে মার্গে স্তরের পর স্তর-সোপানের পর সোপান সাজান আছে-যত পার চলিয়া যাও সে পথের শেষ পাইবে না। যতই অগ্রসর হইবে ততই নানা স্তর নব নব সোপান আবিভূতি হইতে থাকিবে। কিন্তু এ পথও যেমন অফুরন্ত মায়ের পাথেয় বিধানও তেমনি অপূর্ব্ব । ) লীলাময়ী আপনি লীলা। আপনি সংবরণ না করিলে, আপনাকে আপনি চিনাইয়া না দিলে, কে তঁাহাকে চিনিতে পারে-কে এ পথের অন্ত পায় ? জীবকে তিনি তা অনন্তকাল নিনিমেষ নয়নে দেখিতেছেন : ‘ক্রীড়ন্তং কালিকং কালং পীত্বা মোহময়ীং সুরাম পশ্যন্তি চিন্ময়ী দেবী সর্বসাক্ষিত্বরূপিণী ৷” 9