পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করত, ইত্যাদি ইত্যাদি।” বাবার সেই গালভরা আওয়াজ, প্রাণভরা উৎসাহ, আনন্দপুর্ণ চক্ষু, আর শ্রোতাদের সেই ঐকান্তিক আগ্রহ, সকলেই মনে পড়িতেছে। তখনকার সাহিত্য-সেবা যেন দেবতার পূজা। এখনকার আমাদের সাহিত্য-সেবা যেন এনাটমিক্যাল ডিসেকসন। অস্থিমাংস চর্ম্মের ব্যবচ্ছেদ । একখানি সাহিত্য গ্রন্থ পাইলে, আমরা করি কি, দুই ছত্র পড়িতে না পড়িতেই সমালোচনার ছুরি বাহির করিয়া, তাহার ভাষা চিরি, তাহার ভাব চিরি, তাহার অলঙ্কার চিরি, ইতিহাস চিরি, খণ্ড খণ্ড করি, তাহার পর আবার বোতলে পুরিয়া মেডিক্যাল কলেজে পাঠাইয়া দিই। বলি, আমি ত সামান্য ডাক্তার, এই করিয়াছি ; তুমি সাহিত্য-জগৎ-কেমিক্যাল একজামিনার, রাসায়নিক পরীক্ষক,-তুমি একবার এসিড দিয়া, ঘূণা দিয়া, অবজ্ঞা দিয়া পরীক্ষা করিয়া দেখ না কেন, ইহার মধ্যে কি আছে ? আমাদের এখনকার কালের সাহিত্য-সেবা এইরূপ, আর তখনকার সেই কাদম্বরী পাঠ যেন বারাণসীর বিশ্বেশ্বরের আরতি । সাহিত্য তখন উপভোগের সামগ্রী, আরাধনার বস্তু । ক’ত আয়োজনে, ক’ত যত্নে, কত পরিশ্রমে, তখন সাহিত্যসেবা হইত। সাহিত্য-সেবায় লোক ভক্তিতে গদগদ হইত, আনন্দে অশ্র-পরিপ্লাবিত হইত। ভক্তি, আনন্দ, উচ্ছাস এই সকল লইয়া তখন সাহিত্য-সেবা, সাহিত্যচৰ্চা, সাহিত্যপূজা। এখনকার মত ছুরি কঁচি বরষী লইয়া সাহিত্য ভেদ, সাহিত্যবোধ, সাহিত্য-ব্যবচ্ছেদ, তখন ছিল না ! হায় ! আমরা কি সাহিত্য-সেবাই শিখিয়াছি ! ! ! পিতৃদেব স্বয়ং উদ্যোগী হইয়া, অধিনায়কতা করিয়া, তৎকালিক শিক্ষা-বিভাগ পরিচালিত করিয়া উলা গ্রামে তিনটি বাঙ্গালা পাঠশালা ও একটি ইংরাজি বিদ্যালয় স্থাপিত করেন । এইজন্য তঁহাকে সভা করিয়া বক্তৃতা করিতে হইয়াছিল। তখন ইংরাজিতে রামগোপাল ঘোষ বড় বক্তা। কিন্তু ইহার পূর্বে স্কুল স্থাপনের জন্য বা এইরূপ কোন কারণে কেহ যে বাঙ্গালা ভাষায় ২,"ক্তৃতা করিয়াছিলেন, এমন কথা শুনি নাই। সেই বক্তৃতার উদ্বোধীনভাগের নমুনা দিতেছি। “অদ্য রজনী কি সুখদায়িনী ! যে রজনীতে আমরা বৈষয়িক ব্যাপারের ব্যস্ততা হইতে নিরস্ত হইয়া ক্ষণিক কাল সুখে সম্বরণ করণ কারণ এক সাতিশয় সদালোচনায় প্রবৃত্ত-চিত্ত হইয়াছি। যে রজনীতে এই বীরনগরের ভাবী সৌভাগ্যের সমুন্নাতি-হেতু অত্রত্য সাধু ও সমৃদ্ধ জনসমাজের সমাগমন হইয়াছে। যে রজনীতে মদীয় বহুদিবসীয় মনোরথ পূর্ণ হওনের বিলক্ষণ সুলক্ষণ সমীক্ষণ করিয়া মন্মানস আনন্দ-সাগরে নিমগ্ন হইতেছে।” বিলক্ষণ, সুলক্ষণ, সমীক্ষণ, লিখিতে গিয়া পিতার পৌত্র হাসিলেন। সে কথা ত <পোপ সাহেব বলিয়াছিলেন,- YO