পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-সংস্কৃত শিক্ষা আরম্ভ করে দিলাম এবং নিলোপাখ্যান, শকুন্তলা ও ঋগ্বেদের কতক অংশ পড়তে শিখবার পর বার্লিন ও তৎপরে প্যারিসে সংস্কৃত-চৰ্চা করতে যাই । “সেই সময় ভারতবর্ষ দেখবার ইচ্ছা আমার বড়ই প্রবল হয়েছিল। ইয়োরোপীয় ‘ছাত্রদের যেমন রোম অথবা এথেন্স দেখবার একটা তীব্র সম্পূহ থাকে, আমারও তেমনি একবার ভারতবর্ষ দর্শন করে কাশীর পবিত্র গঙ্গায় স্নান করবার জন্ত ঐকান্তিক ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু তখন তাহা আমার পক্ষে একরূপ অসম্ভব ছিল, কারণ একে তা তখন ভারতবর্ষ ছিল ছয় মাসের পথ, তার উপর অধিক ব্যয়সাধ্য। ভারতের মুখ দর্শন করা জীবনে আমার ভাগ্যে ঘটিল না। যৌবনকালে অর্থাভাবে যাওয়া ঘটে নাই, এবং পরে যদিও আমার ভারতীয় বন্ধুদের দ্বারা বার বার নিমজিত হয়েছি, কিন্তু একে বৃদ্ধিকাল, তায় নানা কর্ত্তব্য-কর্ম্মে জড়িত হ’য়ে পড়ে এই সব ছাড়িয়ে যাওয়া দুর্ঘটন হ’ল। তা ছাড়া শুধু ভারতবর্ষ একবার বেড়িয়ে এলেই তো আমার মনস্কামনা পূর্ণ হ’ত না । ( অন্ততঃ দুই তিন বৎসর সেখানে বাস করতে না। -পারলে, ভাষাগুলি ভাল করিয়া শিখতে না পারলে এবং দেশীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে নানা বিষয় আলোচনা করতে না পারলে আমার পক্ষে ভারতভ্রমণ বৃথা হ’ত। আমার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তো শুধু উপর থেকে নয়, তাহা বহু শতাব্দীর ভিতর দিয়ে। কেবল যদি কলিকাতা বা বোম্বাই ঘুরে আসা আমার উদ্দেশ্য হ’ত, তাহলে তো বিলাতের অক্সফোর্ড বা বণ্ড ষ্ট্রীট একবার বৈড়িয়ে এলেই হয় ! “কিন্তু যদিও আমি কোন দিন ভারতে পদাৰ্পণ করিনি তথাপি আমার সৌভাগ্যবশতঃ যুরোপে ভারতের কয়েকজন অসাধারণ প্রতিভাশালী ও সুযোগ্য সন্তানের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। অনেকে আমাকে বলেন যে, এই সকল মহৎচরিত্র ব্যক্তিগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হওয়ায়, ভারতবাসীর চরিত্র সম্বন্ধে আমার একটা ভুল ধারণা জন্মেছে ; কারণ সর্ববিষয়ের উৎকৃষ্টতা দেখলাম। কিন্তু নিকৃষ্টতা কিছু জানতে পারলাম না। আমার মনে হয়-তাতে ক্ষতি কি ? ভারতবাসীর চরিত্রের চরমোৎকর্ষ যে কতদূর হইতে পারে তাহা তো দেখলাম। অবশ্য আমি এমন আশা করি না যে, একটা সমগ্র জাতি কেবল রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, মালাবাৰী বা রমাবাইয়ের ছাচে ঢালা হবে, কিন্তু তা বলে, যে দেশের মধ্যে থেকে এই সব মহাচরিত্র লোক জন্মগ্রহণ করেছেন, সে দেশের জাতীয় চরিত্র উপেক্ষা করবার নয়। ৫০ বৎসর পূর্বে ভারতবাসীরা এমন অবাধে ভ্রমণ করত না। কালাপানি পাৱ হওয়ার বিভীষিকা তখন খুব প্রবল ছিল ; স্বতরাং ১৮৪৪ সালে যখন একদিন সহরময় রাষ্ট্র হইল যে ভারতের একজন নিষ্ঠাবান হিন্দু প্যারিসে এসেছেন এবং সর্ব্বোৎকৃষ্ট У о