পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকলেই লিখিতেন-“শ্রীশ্রীদুৰ্গা” বা ‘শ্রীশ্রীহরি’ । কেবল পিতা লিখিতেন-'শ্রীশো জয়তি ।” ইহা যে কেবল পত্রের শিরোভাগে লিখিতেন এমন নহে, সকালে কোন কিছু লিখিবার পূর্বে এক খণ্ড শাদা কাগজে দুই পঙক্তিতে লিখিতেন। শ্রীশো-জয়তি । আমি অতি বালককালেই, সাধারণ হইতে এই বৈলক্ষণ্য লক্ষ্য করিয়াছিলাম ; কখন জিজ্ঞাসা করি নাই । পিতার সুহৃদবৰ্গ মধ্যে কখন কখন কোন কোন ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত ঐ কথা ধরিলে, পিতা বলিতেন, ‘শ্রীশঃ কি কোন দেবতারই নাম নহে ?” ও কথা ঐক্সপেই শেষ হইত। উলায় আমাদের বাসা বাড়া। তবু সেখানে প্রতিমা গঠন করিয়া সরস্বতী পূজা হইত। এক শ্রীপঞ্চমীতে, সেইস্থানে আমার হাতে খড়ি হয়, বেশ মনে আছে। আমাদের বাসার অতি নিকটেই মুনসেফি কাছারী ঘর, মেটে আটচালা, খড়িটি করা । সেই কাছারীর খড়িটি করা দাওয়ার চারিদিকের মেঝোয়। আমি হাতে খড়ির পরাদিন, খড়ি দিয়া বড় বড় ক খ লিখিয়া ঘুরিয়াছিলাম, আমার বেশ মনে আছে। উলায় সরস্বতী পূজা হইত, দেশে হইত কাত্তিক পূজা। পরে, দুর্গোৎসব হইত। সে ত পরের কথা । এখন কেবল ব্রাহ্মধর্ম্মের সঞ্চিত পিতার সম্পর্ক দেখাইবার জন্য এই কথা পাড়িলাম। তখন ধর্ম্মের টানে না হৌক, তত্ত্ববোধিনীর ভাষার মায়ায় অনেকেই তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্য ছিলেন । ‘অক্ষয় কুমার,-বিদ্যাসাগর,-বাঙ্গলার দুটা বাঘা ভালকো লেখক, তত্ত্ববোধিনীতে নিয়মিতরূপে লিখিতেন। তত্ত্ববোধিনীতে প্রত্নতত্ত্ব, শাস্ত্রতত্ত্ব, বিজ্ঞান, পদার্থ বিদ্যা এই সকলের নিয়মিত আলোচনা হইত । স্বদেশী-হিতৈষী সাহিত্যানুরাগী সকলেই তত্ত্ববোধিনীর একান্ত পক্ষপাতী ছিলেন। আর যদিও প্রথমে রাজা রামমোহন রায় পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে লেখনী চালনা করিয়াছিলেন, কিন্তু তত্ত্ববোধিনীতে পৌত্তলিকতার বিরোধ প্রকাশিত হইত না । তখন হিন্দুধর্ম্মের ব্রণ বা বিস্ফোটকরূপে একরূপ ব্রাহ্মধর্ম্ম স্ফীত হইয়া উঠে নাই। মধ্যে সেইরূপ হইয়াছিল বটে, এখন বোধ হইতেছে সে ভাব অর্থ নাই । ব্রাহ্মধর্ম্মের উপাসনা পদ্ধতি খৃষ্টানীর মত । সপ্তাহে, সপ্তাহে, স্থান বিশেষে সমবেত হইয়া আচার্য্যের অধিনায়কতায় সর্বশক্তিমানের শক্তি, মঙ্গলময়ের মাঙ্গল্য স্মরণ করাই ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা । তাহাতে হিন্দুর বিরক্তি বোধ করিবার কিছু ছিল না, কখন করেও নাই। অনাচারের আড়ম্বরে ব্রাহ্মধর্ম্ম হইতে পৃথক হইয়া পড়ে ; সেটা কলিকাতাতেই বেশী, মফস্বলে সে তরঙ্গ প্রায় যায় নাই। কৃষ্ণনগরে যৎকিঞ্চিৎ গিয়াছিল বটে ; হুগলী, বৰ্দ্ধমানে কিছুমাত্র ছিল না ! অনাচারের সহিত আমাদের কোন সহানুভূতি ছিল না। অনাচারকে ধর্মের অঙ্গ মনে করিতে হইবে, এমন বিড়ম্বনাবুদ্ধি তখনকার কালে আমাদের পরিচিত কাহারও মধ্যে ছিল না। দীর্ঘশিখা শোভিত-, ত্রিপুণ্ডকধারী ব্রাহ্মণপণ্ডিত-মণ্ডলী মধ্যে, অথবা তুলসী-ত্রিকাষ্টি-গলভূষণ VR