পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মধ্যের অক্ষর কহি শুন রায়, পাপীলোকে বলিলে স্বৰ্গে তৈরি যায়। ৪ । হরি হয়, গুণ করি। হ্যায়, নাও লাখ মতি জড়ি হায় । বাবুজিকা বাগমে দোশ লা। উডুকে খড়ি হায় । প্রভৃতি সংস্কৃত, পারসী, বাঙ্গালা, হিন্দি বহুতর প্রহেলিকা আমার কণ্ঠস্থ ছিল ; ক্রমে এমন হইল যে, আমাকে আর কেহ হেঁয়ালীতে আঁটিয়া উঠিতে পারে না । নয় দশ বৎসরের একজন বালক, প্রকাণ্ড প্রহেলিকা-বাজ, বিদ্যা দিগগজ হইয়া উঠিয়াছে। সান্ধ্য মজলিসে এক এক দিন আমাকে লইয়া শুভঙ্করীর চর্চা হইত। ক্রমে স্ফর্ত্তির সহিত চালনার গুণে, আমি শুভঙ্করীতেও কীর্ত্তিমন্ত হইয়া উঠিলাম। আমাদের মুনসেফি কাছারীর একজন উকীল ছিলেন-গুপ্তিপাড়ার নিকট আয়দার রামচন্দ্র দত্ত । তিনি দীর্ঘাকার, বলবান, তেজস্বী পুরুষ । বাঙ্গালায় দলিলদরখাস্ত আদি নাকি অতি সারগর্ভ ভাষায় সংক্ষেপে লিখিতে পারিতেন । একথা পিতৃদেবের মুখে পুনঃ পুনঃ শুনিয়াছিলাম বলিয়া বলিতেছি । সেরূপ ভাল মন্দ বুঝিবার ক্ষমতা আমার তখন ছিল না। তঁহার হাতের বাঙ্গালা লেখা আতি পরিষ্কার ছিল । তিনি এক ইঞ্চি, সওয়া ইঞ্চি পরিমিত অক্ষরে আমাকে বাঙ্গালা কপি লিখিয়া দিতেন, আমি বড় বড় অক্ষরে গোটা গোটা করিয়া ছাপার ছাদে লিখিতাম । কি লিখিতাম, তাহা মনে আছে। লিখিতাম-“ঘোর মোহানগ্ধকার-হর ঐহিক পারিত্রিক মঙ্গলাকীর শ্রীগুরুদেব দেবাদি-দেব শ্রীচরণ সরসী রুহ রাজেষু।” এই গোটা গোটা লেখাতেও খেলা করিতাম । চাল চোয়াইয়া জলে ফেলিয়া, চোয়ানি জল তৈয়ার করিতাম। শাদা কাগজে, সেই ঈষৎ রক্তিম জলে, ঐ ঘোর মোহানাঙ্ককার লিখিতাম। কাগজটি বেশ শুকাইলে, সমগ্র কাগজটির উপর কালীর ভুষা দিয়া, হাতে করিয়া মাড়িয়া মাড়িয়া, সমগ্র কাগজটা যায় চকুচকে কাল করিয়া ফেলিতাম । তাহার পর একটা বড় পীড়ের উপর সেই কাগজটা রাখিয়া, জলের ছাট মারা হইত। যে স্থানটা চোয়ানী জলের লেখন, সেই স্থানটা শাদা বাহির হইয়া পড়িত ; বাকি জমিটা ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণ থাকিত । সেই কালর ভিতরে শাদা লেখা, আমার একটা খেলা । আমার খেলার পরিচয় ঐ রূপ, ব্যায়ামের পরিচয় ব্যাটম্বল। আর খেলা, বায়াম ও আমোদের জন্য পিতা আমাদের বাড়ীর উঠানে একটি ছোট খাট ফুলের বাগান করিয়া দিয়াছিলেন । আমি সেখানে অল্প-স্বল্প খোড়াখুড়ি করি ৩১, ঘাস নিড়াইতাম ; চাকরেরা কুপ হইতে জল তুলিয়া দিলে, সেই জল লইয়া ফুলের গাছে দিতাম। বাগানে প্রজাপতির সঙ্গে খেলা করিতাম, কখন কখন চুপ করিয়া দশবাহু Wr