পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অথচ উদার ধর্ম্ম, অন্য কোন ধর্ম্মেয় প্রতি বিদ্বেষ করে না । আপনার বিস্তাৱ কৱিবাক্স জন্য, কখন নর-শোণিতে হস্ত ধৌত করে না। কর্ম্মই হিন্দুধর্ম্মের বল এবং মহিমা । ঐ ১২৮৬ সালের আষাঢ় মাসে অর্থাৎ পর মাসেই ঢাকার কলেজ ভবনে পিতা বঙ্গসাহিত্য ও বঙ্গভাষা বিষয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন । সেখানিও বড় বড় অক্ষত্রে ৭ a পৃষ্ঠায় সাধারণী যন্ত্রে ছাপিয়াছিল। বিদ্যাপতি হইতে আরম্ভ করিয়া বঙ্কিমবাবু প্রভৃতি পর্য্যন্ত অধিকাংশ লেখকের লেখার ভঙ্গির সমালোচনা এই ক্ষুদ্র পুস্তিকায় অতি বিশদরূপে আছে। ইহার শেষ ভাগের দুই দশ পংক্তি উদ্ধৃত করিয়া নমুনা দিতেছি । “বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বেতাল পঞ্চবিংশতি ও জীবন-চরিতের পর, পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত তারাশঙ্কর ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের কাদম্বরী সাহিত্য সংসারে দর্শন দিল। কাদম্বরী তো। কাদম্বরী ! ভাষাকে যেন ক্ষণকালের জন্য মাতাইয়া তুলিল। যেমন শব্দের ঘটা, তেমনি সমাসের ছটা, তেমনি উপমার আড়ম্বর । বাঙ্গালার জনসোনিয়ান ভাষা । বাঙ্গালায় গন্থা-ছন্দে কাব্যের উচ্ছাস। কিন্তু মদিরার মত্ততা অধিকক্ষণ থাকে না । এই জন্য কাদম্বরীর ভাষা যদিও বঙ্গসাহিত্যের কিছু শোভা সম্পাদনা করিয়াছে, কিন্তু অনুকৃত হইতে পারে নাই। * * * ইহার কিছুদিন পরে সাহিত্য সংসারে আর একজন আশ্চর্য্য লেখক প্রবেশ করিলেন। বাবু বঙ্কিমচন্দ্র আসরে নামিলেন। বাবু বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা অতি চমৎকার। এই লেখা কেবল শ্রুতি মোহকরা নহে, কেবল মধু পরিপূর্ণ নহে, ইহাতে তাড়িত্তেজ প্রভূত ভাবে বহিতেছে, ইহা ভাব-বৈভবেও অতি ঐশ্বর্য্যশালী । বঙ্কিমবাবু কেবল বাঙ্গলা ও সংস্কৃত ভাষায় সুশিক্ষিত নহেন, কিন্তু ইংরাজী বিদ্যাতেও অতি সুপণ্ডিত এবং তঁহার নিজের কল্পনাশক্তিও অতি বলবতী । অতএব তিনি যেমন এক দিক হইতে সংস্কৃত-সাহিত্যের মাধুর্য্য ও সৌন্দর্য্য লাইতে যত্ন করিয়াছেন, তেমনি অন্য দিক হইতে পাশ্চাত্য সাহিত্যের শক্তি ও ঐশ্বর্য্য লাইতে চেষ্টা করিয়াছেন। সুতরাং তঁহার রচনা যেমন মাধুৰীময়ী, তেমনি শক্তিসম্পন্ন ও ভাব-পরিপূর্ণ। তিনি বঙ্গভাষায় একরূপ নূতন স্রোত প্রবাহিত করিয়াছেন। যে দিন বঙ্কিমবাবু কতিপয় বন্ধু লইয়া “বঙ্গদর্শন’ প্রকাশ করিলেন, সেই দিন বঙ্গভাষা-নদীতে উন্নতির কোটালে মহাবিক্রমের সহিত বান ডাকিয়া উঠিল । উন্নতির শ্রোত তর-তর বেগে ছুটিতে লাগিল ; নদীর জল ক্রমশই স্ফীত হইতে লাগিল ; দেখিয়া শুনিয়া ভাবুকের মন আনন্দ রসে গলিয়া গেল। বঙ্কিমবাবু হইতেই -ৰজবাসীগণ “সক” করিয়া বাঙ্গলা বই পড়িতে শিখিয়াছে।” এই সময়ে ঢাকায় পিতার চারি পোয় প্রতিষ্ঠা হুইল। তিনি আদালতে পদস্থ প্রভু, আবু সর্ব্বত্রই মধ্যস্থ বন্ধু। তিনি ঢাকায় থাকিবার সময় মধ্যে, আমি তিনবাদ