পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক পয়সাতে বোধ হয় আটটা কলিকা পাওয়া যাইত, সে ব্যয়টুকুও বঁাচাইবার দিকে তাহার এত দৃষ্টি পড়িল । Gদালদার ছকড়া-গাড়ি। পূর্বেই বলিয়াছি চাঙ্গড়িপোতা গ্রাম কলিকাতার ছয় ক্রোশ দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রতিষ্ঠিত। সেকালে এক প্রকার দোলদার ছকড়-গাডি ছিল, তাহা চাঙ্গড়িপোতার সন্নিহিত রাজপুর গ্রাম হইতে কলিকাতায় আসিত । কুঠীওয়ালা বাবুরা ও অপেক্ষাকৃত পদস্থ ব্যক্তিরা প্রতি সোমবার সেই দোলদার ছক্কড়-গাড়ি চড়িয়া কলিকাতায় আসিতেন ও শনিবার কলিকাতার ধর্মতলা হইতে ঐ গাড়ি চড়িয়া বাড়ি যাইতেন । আমার মাতামহের অবস্থা নিতান্ত মন্দ ছিল না, কিন্তু ঠাহিকে কেহ কখনো গাডিতে দেখিতে পাইত না । তিনি সর্বদাই শনিবার পদব্রজে কলিকাতা হইতে বাড়িতে যাইতেন, এবং সোমবার পদব্রজেই কলিকাতায় ফিরিতেন ; বড়মামাও সেইৰূপ করিতেন । আমি ৮ বৎসরের সময় কলিকাতায় আসিলে, আমিও তাহাদের সঙ্গে পদব্রজে যাতায়াত কারিতাম । এই সকল কারণে লোকে রুপণ বলিয়া আমার মা হামহের অখ্যাতি করিত ; কিন্স্ক আমি কলিকা তায় ট্র্যাহার বাসাতে আসিয়া দেখিয়াছি, তিন জামাতা ছাড়া স্বসম্পৰ্কীয় প্রায় ৮৯ জন যুবক তাহার অন্নে প্রতিপালিত হইতেছে। যাহা হউক, তিনি যে আতিশয় হিসাবী ও মিতব্যয়ী লোক ছিলেন তাহতে সন্দেহ নাই । আমার মাতাঠাকুরাণী গোলোকমণি দেবী স্বীয় পিতার গৃহস্থালীর সুব্যবস্থা ও মিতব্যয়িতা পাইয়াছিলেন । মাতামহী। আমার মাতামহীঠাকুরাণী আকৃতি ও প্রকতিতে মাতামহ হইতে বিভিন্ন ছিলেন । মাতামহ সম্বৎসরের চাল-ডাল গোলাতে সঞ্চয় করিতেন, মাতামহী দরিদ্রা স্ত্রীলোকদিগকে গোপনে ভাকিয়া সেই চাল-ডাল অঞ্চল ভরিয়া দান করিতেন; টাকাকড়ি সর্বদা দুই হাতে দান করিতেন । এজন্য তঁ, তার পতি বা পুত্র তাহার হস্তে সংসারের টাকা রাখিতেন না, আপনাদের নিকট রাখিতেন । কিন্তু মাতামহীর নিজ ব্যয় বলিয়া ভঁাহার হস্তে যাহা দেওয়া হইত, তাহা হইতেই দান-ধ্যান চলিত । এই স্থানে মাতামহীঠাকুরাণীর সদাশয়তার কয়েকটি নিদর্শন দেখাই । আমার পিতা আমাকে কলিকাতায় রাখিয়া গেলে সময় সময় আমার ভয়ানক অর্থাভাব হইত, তখন অনন্যেপায় হইয়া আমি মাতুলালয়ে যাইতাম । মামী দিগকে আমার অভাব জনাইতে সাহস করিতাম না । মাতামহীঠাকুরাণী আমাকে এত ভালোবাসিতেন যে আমি মাতুলালয়ে গেলে, রাত্রে আমাকে স্বীয় শয্যাতে লইয়া গলা জড়াইয়া শুইতে ভালোবাসিতেন । এই নিয়মে তিনি আমাকে অনেক বৎসর পর্যন্ত কাছে রাখিয়া ছিলেন । তিনি কিরূপ স্নেহে আমাকে নিজ বাহু পাশে বঁধিতেন। তাহা স্মরণ o