পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নরুনের অগ্রভাগ দিয়া মা’র বুক চিরিলেন এবং একটা ঝিনুকে রক্ত ধরিয়া এক ভূৰ্জপত্রে দুর্গার স্তব লিখিতে লাগিলেন, তখন আর আমাকে সে ঘরে রাখিতে পারিল না । আমি মেয়েটির কোলে মাথা লুকাইয়া কঁাদিতে লাগিলাম, আমাকে বাহিরে লইয়া গেল। কিয়ৎক্ষণ পরে মা আসিয়া আমাকে কোলে লইলেন ও নানা মিষ্ট সম্বোধনে কান্না থামাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন । আমার বয়স তখন চাবি পাচি ংসরের অধিক হইবে না । আমাৰু মায়ের উনিশ বৎসর বয়সের সময় আমি হইয়াছি, সুতরাং মায়ের বয়স তখন ২৩ কি ২৪ বৎসরের অধিক নয়। ২৪ বৎসরের বালিকাৰু ঐ মানতের কথা যখন স্মরণ করি, তখন বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া মনে ভাবি, এই ধর্মনিষ্ঠা আমার চরিত্রে কৈ ? শৈশবে ঠাকুরের নিবেদিত অল্পে অরুচি। এই সময়কার একটা অদ্ভুত কথা আছে। অনুমান চারি-পাঁচ বৎসর বয়সের সময় আমি কোন মতেই ঠাকুরদের নিবেদিত অন্ন আহাঁর করিতে চাহিতাম না । ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের বাটিতে এটা একটা ভয়ানক কথা। কে যে আমার মাথাতে এ সঙ্কল্প ঢুকাইয়া দিয়াছিল, তাহা বলিলে পারি না । কিন্তু বেশ মনে আছে যে প্রায় প্রতিদিন আমার ভাত খাওয়া লইয়া একটা মহাবিভ্রাট উপস্থিত হইত। আমাদের বাড়িতে শালগ্রাম শিব পঞ্চানন প্রভৃতি অনেক পৈতৃক ঠাকুর ছিলেন। প্রপিতামহ মহাশয়ের কথা বলিবার সময় তঁহাদের বিশেষ বিবরণ দেওয়া যাহবে । প্রতিদিন অন্নব্যঞ্জন তাহদের অগ্রে নিবেদন না করিয়া কাহারও আহার করিবার অধিকার ছিল না। আমারও ধনুর্ভঙ্গ পণ ছিল, ঠাকুরদের নিবেদি ও অন্ন আই?ার করিব না । এজন্য বাবার ও মা’র হাতে গুরুতর প্রহার সহ্য করিতাম তবুও নিজের জেদ ছাড়িতাম না। অবশেষে নিরুপায় দেখিয়া এই নিয়ম কর।” হইয়াছিল যে, আমার অন্নগুলি স্বতন্ত্র রাখিয়া, অপর অন্ন ঠাকুরদের নিবেদন করা: হইত। কিন্তু আমার পিতামাতার প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও নির্ভর খাকিত না । অধিকাংশ সময় ঠাকুরদের নিবেদনের পূর্বে আসিয়া আমি বাহিরের দাবীতে আহা ঐ করিতে বসিতাম। কোন কোন দিন বাবা কৌতুক দেখিবার জন্য রান্নাঘরের ভিতর হইতে অন্ন নিবেদন করিয়া ঠাকুর লইয়া যাইবার সময় দাবার এক প্রান্তে যে আমি আহারে বসিয়াছি, আমার পাতে ঠাকুরদের কুশীর জল ছড়াইয়া দিতেন। আমনি, ‘ভাত, আমি খাব না, বলিয়া আমি হাত তুলিয়া পা ছড়াইয়া কাঁদিতে বসিাতাম ; মা আসিয়া অনেক বুঝাইতেন, কিছুতেই খাওয়াইতে পারিতেন না। শেষে বড়পিসীদের বাড়ি ইহঁতে আমাকে খাওয়াইয়া আনিতে হইত, কারণ তঁহাদের বাডিতে ঠাকুর টাকুর ছিল না। { মায়ের স্বপ্ন। এই ব্যাপার লইয়া আমার মাকে পাড়ার মেয়েদের নিকট বড় লজ্জা SP