পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই সময়ের স্মরণীয় বিষয় আরও অনেক আছে, আমার দুইটি সহাধ্যায়ী বালকের • মাতারা এই সময়ে আমার মাসীর কাজ করিয়াছিলেন । তঁহাদিগকে আমি মাসী বলিয়া ডাকিতাম, সর্বদা তাহদের বাড়িতে যাইতাম, তেঁহাদের কন্যাদের সঙ্গে ভাইবোনের মতো খেলিতাম। ইহাতে আমার জননীর ও ভগিনীর অভাব দূর হইত। ভালো জিনিস কিছু গৃহে হইলেই তাহারা আমাকে ডাকিয়া খাওয়াইতেন। পাছে আমি কুসঙ্গে পডি এই ভয়ে তাহার কলেজের ছুটির দিনে আমাকে নিজেদের বাড়িতে রাখিতেন । এই দশ-এগারো বৎসর বয়সের আর একটি কৌতুকজনক ঘটনা স্মরণ হয়। আমাদের কলেজের সন্নিকটের গলিতে একটি বালিকা ছিল । সে আমার সমবয়স্ক । দেখিতে যে খুব সুন্দরী ছিল তাহা নহে, কিন্তু তাহার মুখখানি আমার বেশ লাগিত । সে তাহদের বাড়ির উঠানে খেলা করিত । আমি আর একটি বালকের সঙ্গে রোজ তাহাকে দেখিতে যাইতাম । সে তার মা'র ভয়ে পথের বালকের সহিত বড় বেশি কথা বলিত না, কিন্তু জানিত যে আমরা তাহাকে দেখিতে ও তাহার সঙ্গে কথা কহিতে ভালোবাসি, তাই সে আমাদের কণ্ঠস্বর শুনিলেই বাহিরে আসিত ও এটা ওটা যাহা দিতাম গোপনে লাইত। আমি বোনের মত তাহাকে কাছে চাহিতাম, কিন্তু তাহাদের বাডির লোকে তাহা দিত না । বহুবাজার পাড়া হইতে কলেজ উঠিয়া গেলে আমার | তাহাকে হাৱাইলাম । প্রথম মৃত্যুদৰ্শন। এই জোলিয়াপাড়াতে থাকিবার সময় আমাদের পরিবারে দুইটি দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথম, উন্মাদিনীর মৃত্যু, দ্বিতীয়, আমার প্রপিতামহদেব রামজয় ন্যায়ালঙ্কারের স্বৰ্গারোহণ । একবার গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে গেলাম । যাইবার সময় কলিকাতা হইতে হঁটিয়া, বাড়িতে যাই। প্রথম দিন চাঙ্গড়িপো ৩য় মামার বাড়িতে গিয়া এক রাত্রি যাপন করিলাম ; পরদিন প্রত্যুথে পদব্রজে যাত্রা করিয়া বাড়িতে গেলাম। বারো বৎসরের বালকের পক্ষে ২৮ মাইল পথ হাঁটিয়া যাওয়া বড় সহজ কথা নহে ; আমি তো গলদঘর্ম হইয়! বাড়িতে গিয়া উপস্থিত। কিন্তু উন্মাদিনীকে আমি এমনি ভালোবাসিতাম। যে বাড়িতে গিয়া যখন দেখিলাম উন্মাদিনী ঘরে নাই, তখন যেন সব শূন্য দেখিলাম। মাকে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বলিলেন, সে বাহিরে আমের বাগানে গিয়াছে । তৎক্ষণাৎ সেই দিকে দৌড়। মা চীৎকার করিতে লাগিলেন, “ওরে বোস, ওরে দাড়া, তাকে ডাকচি,” কে বা তাহা শোনে ? আমি একেবারে গিয়া উন্মাদিনীকে বুকে তুলিয়। ঘরে শানিয়া। তবে নিঃশ্বাস ফেলিলাম । SV)