পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসিবে, চাবি তোমার কাছেই থাকিবে ।” সেই বিস্তীর্ণ পরিবারের ভঁড়ার এক বৃহৎ ব্যাপার ছিল। ৬০৭০ জন খাবার লোক ; ১৭। ১৫ জন চাকর ; ৪৫টা ঘোড়া ; ৮১০টা গরু বাছুর। মানুষদের খাবার চাল-ডাল তেল-মুন, ঘোড়ার দানা-তুষি প্রভৃতি, গরুদের ভূষি-খইল কলাই প্রভৃতি, সমুদয় সেই ভঁড়ারে থাকিত। প্রতিদিন কোন জিনিস কি পরিমাণ দিতে হইবে, তাহা একটা কাগজে লিখিয়া তেঁহারা ভঁড়ারের মধ্যে উহা লটকাইয়া দিয়াছিলেন। আমি প্রাতে গিয়া, ভঁড়ারের দ্বার খুলিয়া চাকর দিগকে ডাকিয়া, সমুদয় জিনিস। ওজন করিয়া দিতাম। দিয়া, চাবি লইয়া গিয়া উপরে পডিতে বসিতাম। তাহার পর সমস্ত দিন আমার সঙ্গে ভাড়ারের সম্পর্ক থাকিত ন। । ঐ জিনিসপত্রের সঙ্গে চাকর-বাকরের তামাকও দেওয়া হইত। নবীনঠাকুর বিদায়। একদিন আমার স্কুল বন্ধ। সেদিন আমি বাড়িতে আছি। রাঁধুনী বামুন নবীনঠাকুর আসিয়া আমাকে বলিল, “ভট্ট বাবু, আমাদের আর একটু তামাক দিন ।” আমি প্রথমে বলিলাম, “যা তামাক দিবার কথা কাগজে লেখা আছে, তা তো দিয়েছি ; আবার কেন চাও?” পরে ভাবিলাম, একটু তামাক বই, তো নয়, দিয়া আসি। ভাবিয়া তামাক দিতে গেলাম। ভাড়ার খুলিয়া তামাক দিতেছি, এমন সময় নবীনঠাকুর আমাকে বলিল, “ভট্ট বাবু, আমাদের সঙ্গে লাগলে এখানে টিকতে পারবেন না।” রাঁধুনী বামুনের কথা শুনিয়া আমার মনে হইল, ভঁড়ারের চাবি আমার হাতে না রাখাই ভালো, চাকর-বাকর আমাকে অন্নাশ্রিত জানিয়া তেমন খাতির করে না, পদে-পদে তাহদের সঙ্গে বিবাদের সম্ভাবনা । এই ভাবিয়া পরদিন চাবিটা তাহাদিগকে ফিরাইয়া দিলাম। প্রকৃত কারণটা আর কাহাকেও বলিলাম না, কেবল মাত্র মহেশচন্দ্র চৌধুরীর খুল্লতাত-পুত্র শ্রীশচন্দ্র চৌধুরীকে বলিয়াছিলাম, কিন্তু তাঁহাকে গোপন রাখিতে অনুরোধ করিয়াছিলাম। আমি যখন চাবি ফিরাইয়া দিতে গেলাম, তখন কর্তাদের মধ্যে একজন বলিলেন, “কোন ফিরিয়ে দিচ্ছ ? তোমার উপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস, তোমার উপর। এ-ভার থাকলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকি।” এই কথা যখন উঠিল, তখন শ্রীশ আসিয়া তঁহাদের নিকট সমুদয় কথা ব্যক্ত করিলেন। ইহা লইয়া তঁহাদের মধ্যে কথাবার্তা উঠিল, তাহা শুনিতে শুনিতে আমি চলিয়া গেলাম । যাইবার সময় দেখিয়া গেলাম, বড়দা (অর্থাৎ মহেশচন্দ্র চৌধুরী মহাশয়) বারাণ্ডার এক ধারে বসিয়া স্নানের পূর্বে দাঁতন করিতেছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই চাকর গিয়া বলিল, “ভট্ট বাবু, শীঘ্র আসুন, শীঘ্র আস্থান ; ভয়ানক কাণ্ড বেধেছে, বড়বাবু (মহেশবাবু) আপনাকে ডাকছেন।” আমি ফিরিয়া গেলাম। গিয়া দেখি, বড়দ রান্নাঘরের দ্বারে দাঁড়াইয়া সিংহগর্জনে নবীনঠাকুরকে বলিতেছেন, “রাখা রাখহোতা বেড়ি tyr