পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ও মাদুর নেবেন না, ওরা মাদুরে শুক ।” এই প্রস্তাবে সঙ্গের পথিকেরা হাসিতে লাগিলেন, “আমরা পাঁচজনে এক মাদুরে শুই, ওরা চারজনে আর এক মাদুরে শুক । এ বিপদে আর ভদ্রতা করবার সময় নাই।” এই কথাতে আমি রাগ করিয়া মাদুরের বাহিরে কাদাতে শুইয়া অগাধ নিদ্রা দিলাম । পরদিন প্রাতে যখন চক্ষু খুলিলাম, তখন দেখি বেশ রোদ উঠিয়াছে। আমার অগ্রেই আর সকলে জাগিয়া প্রাত:কৃত্য সমাপন করিতেছিলেন । আমি বাহিরে গিয়া দেখি, বৃদ্ধ-বৃত্তার যুবক পুত্রটি আমাদের শালতির চােলকদ্বয়ের সঙ্গে পুকুরে ডুবিয়া ডুবিয়া শালতিখানি তুলিবার চেষ্টা করিতেছে। দেখিয়া, তাহাকে ও প্রকার জলে ডুবিতে বারণ করিলাম, কিন্তু সে সে-কথার প্রতি কর্ণপাত করিল না । ক্রমে তিনজনে শালতিখানি তুলিল। চালকদ্বয় তাহার জল ছেচিয়া পরিষ্কার করিতে প্রবৃত্ত হইল, ব্রাহ্মণ যুবক কুলীর ন্যায় মাথায় করিয়া আমাদের জিনিসপত্র বহন করিতে প্রবৃত্ত হইল। আমি চাহিয়! দেখি যে, সেই সময়ে পথে পতিত একটা ভগ্ন বোলতার চাকের উপরে পা দেওয়ায় তাহার পায়ে অনেকগুলি বোলতা কামড়াইয়াছে, তাহার প। ফুলিয়া উঠিতেছে, তবু সে সেই কাজ করিতেছে। তাহ দেখিয়া তাহার প্রতি কিরূপ কৃতজ্ঞতার উদয় হইল, তাহা আর ভাষায় বর্ণনা করিবার নাহে । আমি ব্রাহ্মণ তনয়কে পরে অর্থ সাহায্য করিয়াছিলাম, এবং পরে যখনই পালতি করিয়া বাড়ি যাইতাম, সেই গ্রামে উঠিয়া তাহাদিগকে অন্বেষণ করিয়া কিছু-কিছু অর্থ সাহায্য করিয়া যাইতাম । সে গ্রামটা যেন আমার তীর্থস্থানের ন্যায় হইয়াছিল । কয়েক বৎসর পরে একবার গিয়া আর তাহদের উদ্দেশ পাইলাম না । চটপায়ে উড়ো সাহেবের ঘরে । সাল ও তারিখ মনে নাই, ভবানীপুরে চৌধুরী মহাশয়ুদিগের আশ্রয়ে বাসের কালে, একবার আমার পিতাঠাকুর মহাশয় একখানি সরকারি কাগজ আমার নিকট পঠাইয়া আদেশ করিলেন, তাহা আমাকে স্বয়ং গিয়া স্কুলসমূহের ইনন্সপেক্টর উড়ো সাহেবের হাতে দিতে হইবে। তদনুসারে একদিন কলেজে যাইবার পথে আমি উড়ো সাহেবের আপিসে উপস্থিত হইলাম। তাহার আপিস গৃহে প্রবেশ করিয়া তাহার জন্য অপেক্ষা করিতে লাগিলাম। সাহেব তখন পাশের ঘরে আহারে বসিয়াছিলেন, কিয়াৎক্ষণ পরেই উপস্থিত হইলেন। আমি অভিবাদন করিয়া তাহার হস্তে কাগজখানি দিলাম। তিনি কাগজখানি লইতে চাহিলেন না ; বলিলেন, “তুমি আপিস ঘরের বাহিরে জুতা খুলিয়া এস নাই কেন ?” আমি। এ-ঘরে প্রবেশ করিবার সময় জুতা খুলিতে হয় এ-নিয়ম যে আছে, তা তো জানিতাম না, তাহা হইলে এ-ঘরে প্রবেশ করিতাম না। te