পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হইল, তখন এই প্রশ্ন উঠিল যে আমি তো একমাত্র পুত্র সন্তান, বংশ রক্ষার উপায় কি হইবে ? অতএব আমার পুনরায় বিবাহ দেওয়া স্থির হইল। আমার এরূপ বয়স হইয়াছিল যে বহুবিবাহকে মন্দ বলিয়া জানি । প্রসন্নময়ীর প্রতি তখন আমার যে বড় ভালোবাসা ছিল, তাহা নহে। তবে তঁহার ও তঁহার বাড়ির লোকের সামান্য অপরাধে তঁহাকে গুরুতর সাজা দেওয়া হইতেছে, ইহা অনুভব করিয়াছিলাম । আমি কিৰূপে এইরূপ কঠিন ব্যবহারে সহায়তা করি, ইহা ভাবিয়া মন আন্দোলিত হইতে লাগিল। কিন্তু বাল্যাবধি পিতাকে এরূপ ভয় করিতাম যে, তাহার ইচ্ছাতে বাধা দেওয়া আমার সাধ্যাতীত ছিল । তথাপি আমি নিজে ও জননীক্স দ্বারা তঁহাকে জানিতে দিয়াছিলাম যে, এরূপ বিবাহে আমার মত নাই । বাবা আমাকে বিবাহ দিতে লইয়া যাইবার জন্য আমাকে লাইতে ভবানীপুরে মহেশচন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের ভবনে আসিলেন, এবং আমাকে লইয়। গেলেন। পথে আমাকে আমার দ্বিতীয়বার বিবাহের প্রয়োজনীয়তা বুঝাইতে বুঝাইতে চলিলেন । আমি তঁহাকে বড় ভয় করিতাম, তাহার মুখের উপর কিছু বলিতে পারিতেছি না, সঙ্গে সঙ্গে চলিয়াছি। অবশেষে আমাদের গ্রামের দুই ক্রোশ উত্তরবতী বারাসত গ্রামে যাইবার সময় আমি বাবাকে বলিলাম, “বাবা, আপনি মনে করিতেছেন, আমার স্ট্রীকে বিদায় করিয়া দিয়া আমার শ্বশুরবাড়ির লোকদিগকে সাজা দিবেন, কিন্তু ফলে এ-সাজা আমাদিগকেই পেতে হবে । আমার বোধ হয়। এরূপ কাজ না করাই ভালো ।” যেই এই কথা বলা, অমনি বাবা ফিরিয়া দাড়াইলেন এবং নিজের পায়ের জুতা হাতে লইয়া বলিতে লাগিলেন, “তুই এখান হতে ফিরে যা, আর এক পা তুলেছিস কি এই জুতা মারব।” আমি বলিলাম, “চলুন, বাড়িতে গিয়ে মা’র সামনে কথা হবে। আমার বক্তব্য যা, তা আমি বললাম, তারপর করা না-করা আপনার হাত।” তাহার পর দুজনে বাড়িতে যাওয়া গেল। আমি গিয়া মাকে বলিলাম, “মা, একি হচ্ছে ? আমার স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের উপর রাগ করে একি করা হচ্ছে ?" মা বলিলেন, “জনিস তো, আমার কঁধের উপর একটা বৈ মাথা নেই, আমি বাধা দিয়ে রাখতে পারব না, যা জানে করুক।” বাবা আমাদের আপত্তির প্রতি দৃকপাতও করিলেন না। আমাকে ধরিয়া বিবাহ দিতে লইয়া গেলেন । এই দ্বিতীয় বিবাহ বর্ধমান জেলায় দেপুর নামক গ্রামের অভয়াচরণ চক্রবর্তীর জ্যেষ্ঠা কন্যা বিরাজমোহিনীর সহিত হইল। বিবাহটি ১৮৬৫ কি ১৮৬৬ কোন সালে হইয়াছিল, ঠিক মনে নাই । ve