পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোমরে বাত ধরিবার উপক্রম হইয়াছে। পরীক্ষা দিতে যাইবার সময় একটি বালকে ক্ষ কঁধে হাত দিয়া পরীক্ষার হলে গেলাম ও পরীক্ষা দিয়া আসিলাম । ডিসেম্বরের শেষে পরীক্ষা হইত । বন্ধুপত্নীর মৃত্যু। বোধ হয় ১৮৬৯ সালের জানুয়ারীর শেষভাগে পরীক্ষার ফল বাহির হইল। তখন আমরা মহালক্ষ্মীর পীড়া লইয়া ঘোর সংগ্রামের মধ্যে আছি। হঠাৎ ওলাউঠা পীড়া হইয়া মহালক্ষ্মী शृङ्कानेशान्न শয়ানা । তাহার পীড়া হইলে আমি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পত্র লইয়া ডাক্তাব মহেন্দ্রলাল সরকারের শরণাপন্ন হইলাম। তিনি আমাকে পূর্ব হইতেই জানিতেন ও ভালবাসিতেন। আমার ব্যাকুলতা দেখিয়া প্রতিদিন মহালক্ষ্মীকে দেখিতে আসিতে লাগিলেন, এবং তঁহার সাধ্যে যত দূর হয় তাহা করিতে বাকি রাখিলেন না। অবশেষে কয়েকদিনের পর মহালক্ষ্মীর প্রাণ গেল। তখন তিনি ৮।। ৯ মাস কাল সসত্ত্বা । এইরূপ অবস্থাতে মৃত্যু হওয়াতে প্রাণে বড়ই আঘাত লাগিল। মহালক্ষ্মীর মা ইহার কিছু পূর্বে কাশী হইতে আসিয়া ছিলেন । তিনি যখন আমার গলা জড়াইয়া ধরিয়া “বাবা রে, এত করেও বঁচাতে পারলি না রে” বলিয়া চীৎকার করিয়া কঁদিতে লাগিলেন, যোগেন বালিশে মুখ গুজিয়া পড়িয়া রহিলেন, এবং ঈশান পাগলের মতো ঘর হইতে বাহির, বাহির হইতে ঘর করিতে লাগিলেন, তখন আমি আর মহালক্ষ্মীর জন্য কঁদিব কি ? ইহাদিগকে লিইয়া ব্যস্ত হইয়া পড়িলাম। সেই ক্ষেত্রেই সংবাদ আসিল যে, আমি এল. এ. পরীক্ষায় ইউনিভার্সিটির ফাস্টার্স গ্রেড স্কলারশিপ ৩২ ইংরাজী ও সংস্কৃতে ইউনিভার্সিটিতে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করাতে ডফ স্কলারশিপ ১৫, ও সংস্কৃত কলেজের প্রথম স্কলারশিপ ১২১৬-সর্ব সমেত ৫৯ টাকা, বৃত্তি পাইয়াছি। যাহাদিগের জন্য সংগ্রাম করিতেছিলাম জগদীশ্বর তাহাদিগকে সরাইয়া লইলেন ভাবিয়া আমার চক্ষে জল ধারা বহিতে লাগিল । কিন্তু তখন বুঝি নাই যে তিনি অন্য সংগ্রামের জন্য পূর্ব হইতেই উপায় বিধান করিলেন। সে সংগ্রাম ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা ও পিতৃগৃহ হইতে নির্বাসন । তাহার বিবরণ পরে বলিব । মহালক্ষ্মী চলিয়া গেলে, যখন তাহার মা আমার গলা জড়াইয়া কঁাদিয়া বলিলেন, “বাবা তুমিও কি আমাদিগকে ছেড়ে যাবে ?” তখন আর তঁহাদিগকে ছাড়িতে পারিলাম না । ভবানীপুর ছাড়িয়া আসিয়া তাহদের সঙ্গে আবার কয়েক মাস রহিলাম। কিন্তু ইহার কিছুদিন পরেই যোগেনের বাসা ভাঙিয়া গেল, আমরা স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র স্থানে পড়িলাম, আমাদের জীবনের গতিও পৃথক হইয়া দাড়াইল । মহালক্ষ্মীর শোকটা আমার বড়ই লাগিয়াছিল। মহালক্ষ্মী চলিয়া গেলে, পাঠে গুরুতর শ্রমের ফলস্বরূপ আমার এক প্রকার o