পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমার রাগে রাঙা নয়ন তলে বহে দেখি প্রেমধাৱ । আর একটি সঙ্গীত যাহা তঁহাদের মুখে সর্বদা শুনিতাম, তাহা এই ; মা যার আনন্দময়ী তার কি বা নিরানন্দ ? তবে কেন রোগে শোকে পাপে তাপে বৃথা কান্দ ? মাঝখানে জননী বসে, সস্তানগণ তার চারি পাশে, ভাসাইয়াছেন প্রেমময়ী প্রেমনীৱে । একবার বাহু তুলে মা মা বলে নৃত্য কর সস্তানবৃন্দ। এই গান করিয়া সকলে নৃত্য করিতেন । একদিকে যেমন অনুতাপ ও ক্রন্দন শুনিতাম, অপর দিকে ইহাদের কাছে গিয়া আনন্দ ও নৃত্য দেখিতাম। তখন ইহা বেশ লাগিতা। শিশিরবাবুদের ভাইয়ে ভাইয়ে ভাব দেখিয়া মন মুগ্ধ হইয়া যাইত । ইহার পরেই তাহারা কলিকাতা হিদেরাম বঁদুয্যের গলিতে আসিয়া বাসা করিয়া থাকেন। সে সময়ে তাহাদিগকে সর্বদা দেখিতাম। শিশিরবাবুর অমায়িকতা দেখিয়া আমার মন মুগ্ধ হইয়া যাইত। একদিনের কথা স্মরণ আছে, তিনি সেদিন আমাকে আহার করিতে নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন । আহারের সময় উপস্থিত হইলে, বলিলেন, “কি পরের মতো বাহিরে বসে খাবে ! চল, রান্নাঘরে গিয়ে মাকে বলি, হাড়ি হতে গরম-গরম ভাত তরকারি মা’র হাতে না খেলে সুখ হয় না”। এই বলিয়া দুজনে গিয়া রান্নাঘরে আহারে বসিলাম। যত দূৱ স্মরণ হয়, তাহার জননী গরম-গরম ভাত তরকারি দিতে লাগিলেন ও আমরা আহার করিতে লাগিলাম । ইহার পর হইতে শিশিরবাবুরা অল্পে অল্পে ব্রাহ্মসমাজ হইতে সরিয়া পড়িলেন । খ্যাতির বিড়ম্বন । কিন্তু একটি কারণে এই সময় কিছুদিন ধরিয়া আমার আধ্যাত্মিক অবস্থা বড়ই অসন্তোষকরা হইয়া গিয়াছিল। সে কারণটি এই। যতদিন আমি ব্রাহ্মদের পশ্চাতে ছিলাম ও আপনাকে অনেকাংশে হীন বলিয়া মনে করিতাম, ততদিন আমার অস্তরে বিনয় ও ব্যাকুলত ছিল । আমি আপনাকে সাধারণের মধ্যে ব্রাহ্মরূপে পরিচিত হইবার অযোগ্য বলিয়া মনে করিতাম। কিন্তু দীক্ষার দিন হইতে সে অবস্থা চলিয়া গেল। আমি যেন হঠাৎ পশ্চাৎ হইতে সম্মুখে আসিয়া পড়িলাম ; এবং হঠাৎ যেন একজন বড় ব্রাহ্ম বলিয়া পরিচিত হইলাম । আমি তখন ব্রাহ্মী দলের মধ্যে সর্বত্রই সমাদর পাইতে লাগিলাম। সে সমাদরের উপযুক্ত আমি ছিলাম না। বোধ হয় এতটা সমাদর পাইবার দুইটি কারণ ছিল । প্রথম, ১৮৬৮ সালের শেষে অনামায় ‘নিৰ্বাসিতের বিলাপ’ গ্রন্থাকাৱে প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হইবামাত্র উহা লোকের ܦܠ