পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্রমে ঢাকার প্রাসন্ধ ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট অভয়চরণ দাসের পুত্র প্রাণকুমার দাস একবার কলিকাতায় আসিয়া আমাকে ও অপরাপর কয়েকজনকে তঁহার লেখক শ্রেণী ভূক্ত করিয়া গেলেন। আমার যত দূর স্মরণ হয়, আমি কুমারী রাধারাণী লাহিড়ীকে বলিয়া কহিয়া তাহাকেও লেখিকা করিয়াছিলাম। অবলাবান্ধবে আমার গদ্যপন্থাত্মক প্রবন্ধ মধ্যে মধ্যে প্রকাশিত হইত। দুঃখের বিষয়, উক্ত পত্রিকার একখানি ফাইলও খুজিয়া পাই নাই । অবলাবান্ধবের সহিত যোগ রহিয়াছে, সেই সময়ে একদিন কলেজে পড়িতেছি, এমন সময়ে উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় আসিয়া আমাকে বলিল, “ও রে ভাই, অবলবান্ধবের এডিটর কলিকাতায় এসেছে, আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে ।” অমনি আমি আমাদের ‘হিরো’কে দেখিবার জন্য বাহির হইলাম। গিয়া দেখি এক দীর্ঘ রুতি একহারা পুরুষ, স্কুল-মাস্টারের মতো লম্বা চাপিকান পর, দাড়াইয়া আছেন । তিনি দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়। সেদিন আর অধিক কথা হইল না । সে যাত্রা বোধ হয় তিনি কযেকদিন পরেই দেশে চলিয়া গেলেন ; কিন্তু কিছুদিন পরেই অবলাবান্ধব লইয়া কলিকাতায় আসিলেন, এবং পূর্ববঙ্গীয় যুবকদিগের নেতাস্বরূপ হইয়া ব্রাহ্মসমাজে স্ত্রী-স্বাধীনতার পতাকা উডউীন করিলেন। এই সময় ঢাকা হইতে র্তাহার ও বরিশাল হইতে স্বগীয় বন্ধু দুৰ্গামোহন দাসের, কলিকাতাতে আগমন স্ত্রী-স্বাধীনতার পক্ষে যেন মণিকাঞ্চনের যোগ হইল। ইহার ফল পরে বলিব । আচার্য কেশবচন্দ্র সেনের সহিত যোগ। ভারত আশ্রমে বাসকালে যোগবৃদ্ধি। দ্বিতীয়া পত্নী বিরাজ মোহিনীর আগমন । নগেন্দ্রবাবুর আগমন । স্ত্রী-স্বাধীনতার আন্দোলন । কেশবচন্দ্র সেনের সহিত মতভেদ । দীক্ষার পর কেশবচন্দ্র সেনের সহিত আমার ঘনিষ্ঠত হয় । তঁহাতে আমাতে এমন একটা কি ছিল, যাহাতে তিনি আমাকে দেখিলেই প্রীত হইতেন, আমিও তেঁহাকে দেখিলে প্রীত হইতাম । আমার সঙ্গে তাহার হাসি ঠাট্টা রসিকতা চলিত। একবার একজন আমাকে বলিয়াছিলেন, “কেশববাবুর মনের একটা চাবি তোমার কাছে আছে।” তাহার নিকট আমার মনের ভালো মন্দ কোনো কথা বলিতে সঙ্কোচ বোধ হইত না । অবাধে সকল কথা উটাহার কানে ঢালিতাম। এমন কি, তাহার যে কথা আমার মনের সঙ্গে না মিলিত, তাহাও তাঁহাকে জানাইতে আমার সঙ্কোচ বোধ হইত না । । A e