পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহাত্ম সহিত আমার কিরূপ হাসি ঠাট্টা চলিত, তাহার কয়েকটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা মন্দ নয়। একবার হরিনাভি ব্রাহ্মসমাজের বার্ষিক উৎসবে প্রাতঃকালীন উপাসনাতে আচার্যের কার্য করিবার জন্য আমি তঁহাকে রাজি করি। আমি তখন হরিনাভি স্কুলের হেডমাস্টার। তিনি প্রত্যুষে কলিকাতা হইতে যাত্রা করিয়া প্রাতে গিয়া আমার বাড়িতে উপস্থিত হইলেন। আমি তঁহার প্রান্তরাশের জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত রাখিয়াছিলাম। আমি জানিতাম, তিনি প্রাতে অপরাপর জিনিসের মধ্যে ভিজা ছোলা ও আদা খাইয়া থাকেন। সুতরাং ভিজা ছোলা ও আদা প্রস্তুত রাখা হইয়াছিল। ভিজা ছোলা দেখিয়াই তিনি ভারি খুশি হইলেন। বললেন, “বাৰু, আমি যে প্রাতে ভিজে ছোলা থাই, তাহা জানিলে কিরূপে ?” আমি বলিলাম, “এ আবার আশ্চর্যের বিষয় কি ? আপনার দৈনিক রীতির যদি এতটুকুও না জানলাম, তবে আপনার সঙ্গে কি মিশলাম ? কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, আপনি এত ভিজে ছোলা ভালোবাসেন কেন ?” তিনি হাসিয়া বলিলেন, “ভিজে ছোলা খাব না ! গাড়িতে যুতে টানাও কেমন?” বলিয়াই হাসিয়া আবার বলিলেন, “শুধু গাড়িতে যুতে টানানো নয়, চাবুক মারতেও তো কসুর কর না।” তখন আমরা মধ্যে মধ্যে র্তাহার কাজের সমালোচনা করিতাম। এই চাবুক মারার অর্থ তাহাই। শুনিয়া আমি হাসিয়া বলিলাম, “বেআদবী মাপ করবেন, আপনি বেদীতে বসে চাট মারতেও তো ছাড়েন না ।” এই কথা লইয়া খুব হাসাহসি পড়িয়া গেল । আর একবার আমার একটি বন্ধুর কন্যার নামকরণে র্তাহার উপাসনা করিবার কথা । সন্ধ্যা ৭টার সময় উপাসনা আৱম্ভ হইবে, এইরূপ স্থিায় ছিল । আমরা বসিয়া আছি, তিনি আর আসেন না। তিনি গবর্ণর জেনারেলের বাড়িতে এক সান্ধ্য সমিতিতে গিয়াছেন। বলিয়া গিয়াছেন, তিনি একবার দেখা দিয়াই চলিয়া আসিবেন । এদিকে ৮টা বাজিয়া গেল, ৮টা বাজিয়া গেল, তাহার দেখা নাই । অবশেষে প্রায় ৯টার সময় আসিয়া উপস্থিত হইলেন । আমি হাসিয়া বলিলাম, “আপনি বড়লোকদের সঙ্গে সঙ্গে কেন এত বেড়ান ? কই, আপনাকে তো কোন টাইটেল দেয় না ?” তিনি হাসিয়া বলিলেন,"কেন হে বাপু ? কে. সি. এস. আই. (অর্থাৎ কেশবচন্দ্র সেন আমি), আমার টাইটেলের অপ্রতুল কি ?” আর একবার আমি তঁহার ঘরে গিয়া দেখি, তিনি ঘুমাইতেছেন, কিন্তু চোখে চশমা আছে। জাগিলে আমি বলিলাম, “যদি ঘুমাচ্ছেন, তবে চোখে চশমা কেন ?” তিনি হাসিয়া বলিলেন, “ওহে বাপু, স্বপন তো দেখতে হয়।” 。分象》