পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেশবচন্দ্রের বিদেশ যাত্রা। ১৮৭০ সালের প্রারম্ভে তিনি যখন ইংলণ্ড যাত্রী করিলেন, তখন একদিন আমাদের অনেককে একত্র করিয়া অনেক কথা বলিয়াছিলেন । তিনি বিদেশে যাইতেছেন, কি হয় স্থিরতা নাই। তঁহার অবর্তমানে তঁহার যে সকল মত লইয়া বিবাদ হইবার সম্ভাবনা, সে সকল বিষয়ে কিছু কিছু বলিয়াছিলেন। তন্মধ্যে একটা কথা মনে আছে। তিনি মহাপুরুষের মতের উল্লেখ করিয়া বলেন যে, তিনি মহাপুরুষদিগকে মনে করেন যেন চশমা—অর্থাৎ চশমা। যেমন চক্ষুকে আবরণ করে না, কিন্তু দৃষ্টির উজ্জ্বলতা সম্পাদন করে, তেমনি মহাপুরুষগণ ঈশ্বর ও মানবের মধ্যে দাড়াইয়া ঈশ্বর দর্শনের ব্যাঘাত করেন না, কিন্তু ঈশ্বর দর্শনের সহায়তা করেন। অথবা মহাপুরুষেরা যেন দ্বারবান, দ্বাধুবান যেমন আগন্তুক ব্যক্তিকে প্রভুর সমীপে উপনীত করিয়া দেয়, তৎপরে আর তাহার কাজ থাকে না, তেমনি মহাপুরুষগণ ঈশ্বর চরণে মানবকে উপনীত করিয়া দেন, নিজেরা আর মধ্যে থাকেন না। আমার মনে হইতেছে, আমি তখন তঁহাকে বলিয়াছিলাম ‘মহাপুরুষেরা চশমা, তাহা ঠিক । কিন্তু কাহাকেও যদি বার-বার বলা যায়, “দেখ, দেখ,ঐ তোমার চোখে চশমা,ঐ তোমার চোখে চশমা,’ তাহা হইলে দ্রষ্টব্য পদার্থ হইতে তাহার দৃষ্টিকে তুলিয়া, সে দৃষ্টিকে চশমার উপরেই ফেলিয়া দেওয়া হয়। তেমনি মহাপুরুষগণ ঈশ্বর দর্শনের সহায় হইলেও, “ঐ মহাপুরুষ, ঐ মহাপুরুষ’ করিয়া যদি তাঁহাদের প্রতিই দৃষ্টিকে অধিক আরুষ্ট করা হয়, তাহা হইলে ঈশ্বরকে পশ্চাতে ফেলা হয়।” যাহা হউক, কেশবচন্দ্র ইংলেণ্ডে গমন করিলে, তেঁাহার বিচ্ছেদে আমি বড়ই ক্লেশ। পাইয়াছিলাম, এবং তৎকালের মনের ভাব প্রকাশ করিয়া একটি কবিতা লিখিয়াছিলাম ; সেটি অঁহার পত্নীর উক্তিতে। তাহা বোধ হয অবলাবান্ধবে কি অন্য কোনো পত্রিকাতে প্রকাশিত হইয়াছিল। আমি কেশববাবুর নিকট অনেক শিখিয়াছি। কিভাবে ঈশ্বরের কাজ করিতে হয়, তাহা ভঁাহাকে দেখিয়া বুঝিয়াছি। ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস ও নির্ভর কাহাকে বলে, তাহা তাহাকে দেখিয়া জানিয়াছি । কেশববাবু কয়েক মাস পরে ইংলণ্ড হইতে ফিরিয়া আসিলেন। তিনি আসিয়াই নানা নূতন কাজের প্রস্তাব করিলেন। ইণ্ডিয়ান রিফরম এ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সভা স্থাপন করিয়া, তাহার অধীনে টেস্পারেন্স, এডুকেশন, চীপ লিটারেচার, টেকনিকাল এডুকেশন প্রভৃতি অনেক বিভাগ স্থাপন করিলেন। আমি সকল কাজেই তঁহাৱা অনুসরণ করিতাম। আমি সুরাপান বিভাগের সভ্যরূপে 'মদ না গাৱলী’ নামে একখানি মাসিক পত্রিকা বাহির করিলাম। তাহাতে খুৱাপানের অনিষ্টকারিতা

: R R