পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের সাহিত যোগ। এইরূপে একদিকে যেমন খ্রীষ্টীয় শাস্ত্র ও শ্রীষ্টীয় সাধুর ভােব আমার মনে আসে, অপরদিকে এই সময়েই রামকৃষ্ণ পরমহংসের সহিত আমার আলাপ হয়। তাহার ইতিবৃত্ত এই। আমাদের ভবানীপুর সমাজের একজন সভ্য দক্ষিণেশ্বরে বিবাহ করিযাছিলেন। তিনি মধ্যে-মধ্যে শ্বশুরবাড়ি হইতে আসিয়া আমাকে বসিতেন যে, দক্ষিণেশ্বরের কালীর মন্দিরে একজন পূজারি ব্রাহ্মণ আছেন, তঁহার কিছু বিশেষত্ব আছে। এই মানুষটি ধর্ম সাধনের জন্য অনেক ক্লেশ স্বীকার করিয়াছেন। শুনিষ রামকৃষ্ণকে দেখিবার ইচ্ছা হইল। যাহব যাইব করিতেছি, এমন সময় মিরার কাগজে দেখিলাম যে, কেশবচন্দ্র সেন মহাশয় তাহার সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলেন, এবং ঊর্তাহার সহিত কথা কঠিযা প্রীতি ও চমৎকৃত &ইয়া আসিয়াছেন । শুনিয়া দক্ষিণেশ্বরে যাইবার ইচ্ছাটা প্রবল হহয়া উঠিল । আমার সেই বন্ধুটিকে সঙ্গে করিষা একদিন গেলাম। প্রথম দর্শনের দিন হইতেই আমার প্রতি রামকৃষ্ণের বিশেষ ভালোবাসার লক্ষণ দৃষ্ট হইল। আমিও তঁহাকে দেখিয়া বিশেষ চমৎকৃত হইলাম। আর কোনো মানুষ ধর্ম সাধনের জন্য এত ক্লেশ স্বীকার করিয়াছেন কি না, জানি না। রামকৃষ্ণ আমাকে বলিলেন যে, তিনি কালীর মন্দিরে পূজারি ছিলেন। সেখানে অনেক সাধু-সন্ন্যাসী আসিতেন। ধর্ম সাধনার্থ তাহারা যিনি যাহা বলিতেন, সমুদয় তিনি করিয়া দেখিযাছেন। এমন কি, এইৰূপ সাধন করিতে করিতে তিনি ক্ষেপিয়াণ গিয়াছিলেন, কিছুদিন উন্মাদগ্রস্ত ছিলেন। তদ্ভিন্ন তাহার একটা পীড়ার সঞ্চাও হইয়াছিল যে, তাহার ভাবাবেশ হইলেই তিনি সংজ্ঞাহীন হইয়া যাইতেন। এই সংজ্ঞাহীন অবস্থাতে আমি তাহাকে অনেকবার দেখিয়াছি ; এমন কি, অনেকদিন পরে আমাকে দেখিয়া আনন্দে অধীর হইয়া ছুটিয়া আসিয়া আমার আলিঙ্গনের মধ্যেই তিনি সংজ্ঞাহীন হইয়া গিয়াছেন। সে যাক। রামকৃষ্ণের সঙ্গে মিশিয়া এই একটা ভাব মনে আসিত যে, ধর্ম এক, রূপ ভিন্ন-ভিন্ন মাত্র। ধর্মের এই উদারতা ও বিশ্বজনীনতা রামকৃষ্ণ কথায়-কথায় ব্যক্ত করিতেন । ইহার একটি নিদর্শন উজ্জ্বল রূপে স্মরণ আছে। একবার আমি দক্ষিণেশ্বরে যাইবার সময় আমার ভবানীপুরস্থ খ্রীষ্টীয় পাদরী বন্ধুটিকে সঙ্গে লাইয়া গেলাম, তিনি আমার মুখে রামকৃষ্ণের কথা শুনিষ তাহাকে দেখিতে গেলেন। আমি গিয়া যেই বলিলাম, “মশাই, এই আমার একটি খ্রীষ্টান বন্ধু আপনাকে দেখতে এসেছেন,” অমনি রামকৃষ্ণ প্রণত হইয়া মাটিতে মাথা দিয়া বলিলেন, “যীত শ্রীষ্টীয় চৰণে আমার শত্ব-শিত প্রণাম।” আমার খ্রীষ্টীয় বন্ধুটি আশ্চর্যান্বিত হইয়া জিজ্ঞাসা কৰিলেন, “মশাই যে যীশুর চরণে প্রণাম করছেন, তঁকে আপনি কি মনে করেন?”