পাতা:আত্মকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ কাজ করিয়া যে পবিত্র আনন্দ অনুভব করিতাম। তাহার বর্ণনা হয় না, কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সেও এই রকম করিয়া আবার অনুভব করিয়াছি। বিধাতার কি অপূর্ব মঙ্গলময় বিধান! তিনি বুড়ো মানুষকেও বালক করিয়া বাল্যকালের নির্ম্মল পবিত্র আনন্দের অধিকারী করেন । কয়দিনই সন্ধ্যার আরতি হইয়া গেলে, আমরা মহা আনন্দে আটচালায় না।চিতাম। আর গাহিতাম-ষড়ানন ভাই, তোর কেন নবাবী এত, তোর ঘরে নাইক অষ্টারম্ভ, পরের বাড়ী কেঁচা লম্বা, তোর মা সেই জগদম্বা, পেটের জ্বালায় ছাগল খেতি । ঢুলি নাচের বাজনা বাজাইত, আর আমরা নাচিতাম । চক্ষু বুজিয়া ভাবিতে ভাবিতে ঠিক সেই নাচানাচি, এবং ঠিক সেই আনন্দ অনুভব করি । হায়! দেশের কি দুর্ভাগ্য ! এখনকার বালকে বুড়োর মত হইয়াছে, লজ্জায় ও গাম্ভীর্য্যে এক কিন্তু তিকিমাকার জীব। যাহাঁদের বালকে আনন্দ ও উল্লাস করিতে পারে না, তাহদের মঙ্গল হওয়া কি সম্ভব ? তখন বুড়াতেও বালকের ন্যায় আনন্দ করিত । আমাদের সেই পরাণ জেঠা বয়সে প্রায় সত্তর ; কিন্তু আনন্দে উল্লাসে আমাদের সঙ্গে নাচি ত ঠিক আমাদেরই মতন বালক । নবমীর বলিদানের পর যে কাদামাটা হইত। পরাণ জেঠাই তো তাহার প্রাণস্বরূপ ছিলেন । নিজে কলসী কলসী জল ঢালিয়া নিজে প্রথমে গড়াগড়ি আরম্ভ করিতেন । আমরা অমনি নাচিয়া উঠিতম। ১০ । ১৫ জনে গড়াগড়ি আরম্ভ করিতাম, সর্বাঙ্গে কাদা, সেই কাদা-মাখা গায়ে পরাণ জেঠার সঙ্গে পাড়ার অন্য অন্য পূজাবাড়ীতে গিয়া সেখানে আবার কাদামাটা করিতাম, আমাদের ঢাক ঢোল আমাদের সঙ্গে যাইত । ক্রমে অন্যান্য বাড়ীর ঢাক ঢোল ও আমাদের সঙ্গ লইত । যখন শেষ বাড়ীতে কাদামাটী করিয়া নাচিতে নাচিতে পুকুরে নাইতাম তখন ঢাক ঢোলের শব্দে দশ খানা গ্রাম কঁপিয়া উঠিত, দশখানা গ্রামের লোক ছুটিয়া দেখিতে আসিত। তখন আমাদের বড় পুকুরে ঝপাং ঝপাং করিয়া পড়িয়া পুকুর তোলপাড় করিতাম ও গাবাইয়া তুলিতাম। সেই সেকালের উল্লাস, কিন্তু বুড়ে বয়সে এই রকম করিয়া চক্ষু বুজিয়া যেন শরীরীবৎ আবার দেখিয়াছি, দেখিয়া তাহার সহিত আবার সেই তখনকার মতন মাতামাতি করিয়াছি। মানুষের সুখের সীমা আছে কি ? মানুষের সুখের ভাণ্ডার ফুরাইবার নয়। সকলেরই জীবনে, বিশেষ বাল্যকালে, এইরূপ আনন্দোপভোগ হইয়া থাকে। বুড়া হইয়া সকলেই যদি আমার মতন চক্ষু বুজিয়া সেই বাল্যানন্দের ছবি মনে ফলাইয়া তোলেন, সকলকেই স্বীকার করিতে হয় যে, কৃপায় ভগবানের r