পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম পরিচ্ছেদ

 এই প্রসঙ্গে ইংরাজী ভাষায় লিখিত ‘আত্মচরিত’ প্রচারের ৩ বছর পরে প্রকাশিত বাংলা ১৩৪০ সালের ৫ই ফাল্গুনের ‘দেশ’ পত্রিকায় সু-সাহিত্যিক শ্রীযুক্ত যোগেশচন্দ্র বাগল প্রদত্ত বিবরণ নিম্নে উদ্ধৃত করিতেছি। উহা হইতে আমার পিতার বিদ্যোৎসাহিতার পরিচয় মিলিবে:—

 “ঊনবিংশ শতাব্দীর আরম্ভে কলিকাতায় প্রথম ইংরাজী শিক্ষার প্রবর্তন হয়। কিছু সময়ের মধ্যে এই শিক্ষা বাঙ্গলাদেশের সুদূর পল্লীতেও ছড়াইয়া পড়ে। সেকালে বিদ্যোৎসাহী লোকের বড় একটা অভাব ছিল না। তাঁহাদের চেষ্টায় গ্রামে পল্লীতে ইংরাজী বাঙ্গলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। আর একটি লক্ষ্য করিবার বিষয় বালিকা বিদ্যালয়ও তখন নানাস্থানে স্থাপিত হইয়াছিল। আচার্য প্রফল্লচন্দ্র রায়ের পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী মহাশয় নিজ রাড়ুলিগ্রামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিয়া সেখানকার বালক বালিকাদের শিক্ষার সুবিধা করিয়া দেন। ‘সংবাদ প্রভাকর’ ও ‘সাধুরঞ্জন’ হইতে এখানে যে সব অংশ উদ্ধৃত হইল তাহাতে সে যুগে বাঙ্গলাদেশে শিক্ষাপ্রচারের উদ্যোগ আয়োজন সম্বন্ধে যথেষ্ট আভাষ পাওয়া যাইবে।”

রাড়ুলি অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তার

সংবাদ প্রভাকর ১০ ফেব্রুয়ারী ১৮৫৮। ২৯ মাঘ, ১২৬৪]

আমরা নিম্নস্থ পত্রখানি অতি সমাদরপূর্বক প্রকটন করিলাম।

 “কিয়দ্দিবস অতীত হইল জিলা যশোহরের অন্তর্গত রাড়ুলিগ্রাম নিবাসি শ্রীযুক্ত বাবু হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী মহাশয় এবং অন্যান্য কতিপয় মহোদয়গণের প্রযত্নে প্রোক্ত রাডুলি পল্লীতে গবর্ণমেণ্ট সাহায্যকৃত একটী স্বদেশীয় ভাষার বিদ্যালয় সংস্থাপিত হয়, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়াবধি বালকবালিকারা যথাবিধিক্রমে শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়া আসিতেছে এবং সুশিক্ষার প্রভাবে তাহারা স্ব স্ব পঠিত বিষয়ে একপ্রকার ব্যুৎপন্নও হইয়াছে বটে, ফলতঃ অতি অল্পকালের মধ্যে এই রাডুলি বিদ্যালয়স্থ ছাত্রেরা যেরূপ কৃতকার্য হইয়াছে, অন্যত্রে প্রায় সেরূপ শুনিতে পাওয়া যায় না। বিগত পৌষ মাসে জিলা যশোহরের শ্রীযুক্ত কালেক্টার সাহেব তথা খুলনিয়ার ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট শ্রীযুক্ত বাবু ঈশ্বরচন্দ্র মিত্র মহাশয় এবং অন্যান্য কতিপয় সদ্বিদ্যাশালী মহাত্মাগণ অত্র বিদ্যালয়ে শুভাগমন পুরঃসর বালক বালিকাকুলের পরীক্ষা গ্রহণে যথোচিত সন্তোষ প্রাপ্ত হইয়াছেন। এস্থলে বিদ্যালয়ের সমুন্নতির বিস্তারিত বিবরণ করিতে হইলে এই বলা উচিত যে বিদ্যালয়ের পণ্ডিত শ্রীযুক্ত মোহনলাল বিদ্যাবাগীশ মহাশয়ের সুনিয়মে শিক্ষাপ্রদান ও প্রস্তাবিত বাবু হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরী মহাশয়ের অবিচলিত অধ্যবসায় এবং গাঢ়তর উৎসাহই তাহার প্রধান কারণ।”

সংবাদ সাধুরঞ্জন, ২৪শে মে, ১৮৫৮। ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১২৬৫।

নিম্নস্থ বিদ্যালয় সম্বন্ধীয় বিষয়টি অতি সমাদর পূর্বক প্রকটন করা গেল।

 “গভর্ণমেণ্টের আনুকূল্য প্রাপ্ত, যশোহরস্থ রাডুলির স্কুলের বালকাবলীর ছাত্রবৃত্তির পরীক্ষা বিগত বর্ষের সেপ্টেম্বর মাসে ডেপটি ইনস্পেক্টর শ্রীযুত বাবু দয়ালচাঁদ রায় মহাশয় গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহাতে চারিজন বালক ছাত্রবৃত্তি প্রাপ্ত হইয়াছে। প্রথম শ্রেণীর ছাত্র হরিশ্চন্দ্র বসু, নবীনচন্দ্র ঘোষ কলিকাতাস্থ মেডিকেল কলেজে ও শীতলচন্দ্র বসু, পরেশনাথ রায়, যশোহরস্থ ইংরাজী স্কুলে আগামী ১লা মার্চ হইতে প্রবিষ্ট ও অব্যাঘাতে চারি বর্ষ পর্যন্ত ছাত্রবৃত্তি সম্ভোগে বিদ্যানুশীলন করিবেন। এই ছাত্রগণের অবলম্বিত অধ্যবসায় সমধিক ফলোপধায়ক দর্শনে অন্যান্য ছাত্রগণের আশালতার উদ্দীপকতা