পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমি কয়েকটা গোখরা সাপ ধরাইলাম এবং তাহদের বিষদাঁত পরীক্ষা করিলাম। ফেরারের Thanatophidiaএর সাহায্যে সপদংশনের রহস্য সম্বন্ধেও আলোচনা করিলাম। এই সময়ে (১৮৯১–৯২) আর একটি বিষয় গরতর ভাবে আমার চিত্ত অধিকার করিল। আমাদের দেশের যুবকেরা কলেজ হইতে বাহির হইয়াই কোন আরামপ্রদ সরকারী চাকরী, তদভাবে ইউরোপীয় সওদাগরদের আফিসে কেরাণীগিরি খোঁজে। আইন, ডাক্তারী প্রভৃতি বত্তিতেও খাব ভিড় জমিতে আরম্ভ হইয়াছিল। কেহ কেহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হইতে পাশ করিয়া বাহির হইত, কিন্তু দভাগ্যক্রমে তাহারাও অসহায়ভাবে চাকরী খাজিত। এই অবসরে কম কুশল, পরিশ্রমী অ-বাঙালীরা বিশেষভাবে রাজপতনার মরভূমি হইতে আগত মাড়োয়ারীরা, কেবল কলিকাতায় নয়, বাংলার অভ্যন্তরে সদর গ্রাম পর্যন্ত ছড়াইয়া পড়িতেছিল, আমদানি রপ্তানি ব্যবসায়ের সমস্ত ঘটি তাহারা দখল করিয়া বসিতেছিল; সংক্ষেপে কঠোর প্রতিযোগিতায় বাঙালীরা পরাস্ত হইতেছিল এবং যে সব ব্যবসা-বাণিজ্য তাহদের দখলে ছিল, ক্রমে ক্রমে সেগুলির অধিকার ছাড়িয়া দিয়ে তাহদের সরিয়া পড়িতে হইতেছিল। কলেজে শিক্ষিত বাঙালী যুবকেরা সেক্সপিয়রের বই হইতে মখস্থ বলিতে পারিত এবং মিল ও পেন্সারও খাব দক্ষতার সঙ্গে আওড়াইতে পারত, কিন্তু জীবনযন্ধে তাহারা পরাস্ত হইত। তাহদের চারিদিকে অনাহারের বিভীষিকা। তব, হাইস্কুলের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়িতেছিল এবং ব্যাঙের ছাতার মত কলেজ গঙ্গাইয়া উঠিতেছিল। এই সমস্ত যুবকদের লইয়া কি করা যাইবে ? বিজ্ঞান শিক্ষা কমে ক্রমে যবেকদের প্রিয় হইয়া উঠিতেছিল। কিন্তু যুবকদের এবং তাহদের অভিভাবকদের মনে একটা অস্পষ্ট ধারণা ছিল যে, লজিক, দশনশাস্ত্র বা সংস্কৃতের পরিবতে রসায়ন বা পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি শিখিলে তাহারা কোন না কোন প্রকারে ব্যবসা-বাণিজ্য ফাঁদিয়া বসিতে পারবে, অন্ততঃ জীবিকার জন্য চাকরী খাজিয়া বেড়াইতে হইবে না। কিন্তু শীঘ্রই দেখা গেল, এই ধারণা ভুল। গত শতাব্দীর ১০এর কোঠায় যাহারা রসায়ন শাসে এম, এ পড়িত (এম, এস-সি ডিগ্রী তখনও হয় নাই) তাহারা সঙ্গে সঙ্গে আইনও পড়িত। আমি প্রায়ই তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিতাম, রসায়নের সঙ্গে আইনের সম্বন্ধ কি? অধিকাংশস্থলে উত্তর পাওয়া যাইত যে, “আর্ট কোসে” বহন বই মুখস্থ করিতে হয়। কিন্তু রসায়ন শাসে কম বই পড়িতে হয়। লেবরটারির কষ্টকর কাষেও তাহদের আপত্তি নাই! অবশ্য কেহ কেহ রসায়ন শাস্ত্র ভালবাসিত বলিয়াই উহা পড়িত্ব। এ সম্বন্ধে আমি একটি বিশেষ দষ্টাতের উল্লেখ করিতেছি। একজন বি, এল উপাধিধারী ছাত্র রসায়নে এম, এ, পড়িত, আদালতে সে কিছ দিন ওকালতীও করিয়াছিল। আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম যে সে আদালত ছাড়িয়া কলেজে আসিল কেন? ছাত্রটি তৎক্ষণাং উত্তর দিল “আমি এম, এ, পাস করিলে আমার নামের শেষে এম, এ, বি, এল উপাধি যোগ করিতে পারিব এবং তাহার ফলে আমার মন্সেফাঁ চাকরী পাইবার যোগ্যতা বাড়িবে।" আমি বেদনাহত চিত্তে বলিয়া ফেলিলাম—“হায়, রসায়ন শাম্ম, কি উদ্দেশ্যে তোমাকে ব্যবহার করা হইতেছে"