পাতা:আত্মচরিত (সিগনেট প্রেস) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই পতিত পত্র যখন বিপদে পড়িয়া সমরণ করিল, তখন আর সস্থির থাকিতে পারিলেন না। দরিদ্র ব্রাহীমণ, সম্পােবল নাই। যে সম্পবল হাতের কাছে পাইলেন, তাহাই লইয়া ছটিলেন। কি উদারতা! এই উদারতা তাঁহার প্রকৃতির এক মহা সদগণ। তিনি আসিয়া কয়েকদিন থাকিয়া, এক স্বতন্ত্র বাড়ি ভাড়া করিয়া মাকে আমার পরিচযার জন্য সেই বাড়িতে রাখিয়া গেলেন। মাতাঠাকুরাণী বিরাজমোহিনীকে ও আমাকে লইয়া সেই বাড়িতে রহিলেন। মাতাঠাকুরাণীর জপ-তপ ব্রত-নিয়ম উপবাসাদির মাত্রা অসম্ভবরপ বাড়িয়া গেল। প্রায় প্রতিদিন দেড় মাইল পথ হটিয়া গঙ্গাস্নান করিতে যাইতেন, ইস্টদেবতার চরণে শত-শত প্রণাম করিয়া এই অধম পাত্রের জীবন ভিক্ষা করিতেন। তৎপরে গহে ফিরিয়া আমারই রোগশয্যার পাশে বা বসিয়া মাটি দিয়া শিব গড়িয়া পাজাতে প্রবত্ত হইতেন। আমি শাইয়া শইয়া তাঁহার পাজার নিম্ঠা দেখিতাম । ওদিকে, বাবা মাকে আমার নিকট রাখিয়া গিয়াছেন বলিয়া গ্রামের জ্ঞাতি কুটস্পােববগের মধ্যে কোহ-কেহ দলাদলি আরম্ভ করিলেন। বাবা তখন বজের ন্যায় কঠোর হইয়া দাঁড়াইলেন। “একঘরে করে করােক, আমার কতব্য কাজ আমি করেছি,” বলিয়া সে দলাদলির প্রতি ভ্রক্ষেপও করিলেন না। এই দলাদলিতে কিছদিন গেল। এদিকে মা আমার সেবাতে বিব্রত। আমার প্রপিতামহ রামজয় ন্যায়ালঙ্কার মহাশয় অতি সাধপরিষ ছিলেন। তিনি মায়ের মন্ত্রদাতা গাের ছিলেন। তাঁহার প্রতি আমাদের - পরিবারস্থ সকলের ও জ্ঞাতি কুটশেবর প্রগাঢ় ভক্তি ছিল। তাঁহার লাঠি, তাঁহার জপমালা, তাঁহার যোগপট্ট প্রভৃতি যো-কিছ চিহ্ন ঘরে ছিল, সে-সমদায়ের প্রতি মা'র এত ভক্তি যে বাড়ির কাহারও গারতের পীড়া হইলে, সেগলি তাহার রোগশয্যাতে স্থাপন করা হইত, রোগমন্তি না হইলে অন্তরিত করা হইত না। সেই নিয়মানসারে জননীদেবী ন্যায়ালঙ্কার মহাশয়ের লাঠি মালা প্রভৃতি আনিয়া আমার শয্যাতে স্থাপন করিয়াছিলেন। তিন মাস সেইরােপ রহিল, অন্তরিত করিতে দিলেন না। আমার পীড়ার উপশম হইলে তবে তুলিয়া লওয়া হইল। ভূত্যের ভালোবাসা। এই পীড়ার সময় আমার জনক-জননীর যেমন আশচযা সন্তানবাৎসল্য দেখিলাম, তেমনি আমার বিশবাসী অনাগত ভূত্য খোদাইয়ের অদভুত প্রভুভক্তির পরিচয় পাইলাম। খোদাইয়ের সন্মতি আমার মনে পবিত্র প্রেমের উৎস সবরপ হইয়া রহিয়াছে। আমি তাহাকে আমার ‘মেজিবৌ’ নামক উপন্যাসে অমর করিবার চেন্টা করিয়াছি। ভবানীপরে হেডমাস্টারি করিবার সময় খোদাইকে রাখি। তখন হইতে তাহার গণাবলি দেখিয়া আমার মন তাহার প্রতি আতিশয় অন্যরক্ত হয়। আমার প্রতিও তাহার প্রগাঢ় প্রীতি জন্মে। সে আমার হিতৈষী বন্ধ ও পরিবার-পরিজনের রক্ষক ছিল। আমি তাহার হাতে টাকাকড়ি ও সংসারের ভার দিয়া নিশিচন্ত থাকিতাম। পীড়া হইয়া কম হইতে অধ্য বেতনে বিদায় লইয়া যখন আসিয়া রোগশয্যায় পড়িলাম, তখন খোদাইয়ের বেতন দেওয়া আমার পক্ষে অসাধ্য হইবে এই ভাবিয়া, আমি আনন্দমোহন বসর সঙ্গে পরামর্শ করিয়া আমার রোগমন্তি পর্যন্ত অধিক বেতনে তাহাকে তাঁহার বাড়িতে রাখিয়া দিলাম। মা যখন আমাকে লইয়া সম্ভবতন্ত্র বাসা করিয়া আছেন, তখন একদিন প্রাতে দেখি, খোদাই আসিয়া উপস্থিত। ܬ9 ܠ