পাতা:আত্মচরিত (২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৪৭-৫৬ ] শৈশবে ঠাকুরের নিবেদিত অন্নে অরুচি 9 দিবেন। কয়েক দিনের পর আমি সারিয়া উঠিলাম। যেদিন ব্রত উদযাপনেব দিন আসিল, সেদিন পাড়ার একটি মেয়ে আমাকে কোলে করিয়া মায়ের ব্রত উদযাপন দেখিবার জন্য ঠাকুরঘরে লইয়া গেলেন। গিয়া দেখি, মা স্নান করিয়া আসিয়া দুই হাঁটুর উপর দুই হাত দিয়া যোগাসনে বসিয়াছেন। পূজারি ব্রাহ্মণ র্তাহার দুই হাতে ও মাথার উপরে কাদার তাল দিয়া তদুপরি জ্বলন্ত আগুনের সারা বসাইয়াছেন এবং মন্ত্র পড়িতে পড়িতে সেই আগুনে ধূনার গুড়া নিক্ষেপ করিতেছেন, আগুন দীপ দাপ করিয়া জ্বলিতেছে। দেখিয়া আমার বড় ভয় হইল। মনে হইল আমার মাকে পোড়াইতে যাইতেছে। র্যাহার কোলে ছিলাম, ভয়ে তাহার কাধে মুখ লুকাইলাম। তারপর যখন একখানা ছুরির বা নরুনের অগ্রভাগ দিয়া মারি বুক চিরিল এবং একটা ঝিনুকে রক্ত ধরিয়া এক ভূৰ্জপত্রে দুর্গার স্তব লিখিতে লাগিল, তখন আর আমাকে সে ঘরে রাখতে পারিল না। আমি মেয়েটির কোলে মাথা লুকাইয়া কঁাদিতে লাগিলাম ; আমাকে বাহিরে লইয়া গেল। কিয়ংক্ষিণ পরে মা আসিয়া আমাকে কোলে লইলেন, ও নানা মিষ্ট সম্বোধনে থামাইবার চেষ্টা । করতে লাগিলেন । আমার বয়স তখন চারি পাঁচ বৎসরের অধিক হইবে না। আমার মায়ের উনিশ বৎসর বয়সের সময় আমি হইয়াছি; সুতরাং মায়ের বয়স তখন ৪৩ কি ২৪ বৎসরের অধিক নয়। ২৪ বৎসরের বালিকার ঐ মানতের কথা যখন স্মরণ কুরি, তখন বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া মনে Tভাবি, এই ধর্ম্মনিষ্ঠা আমার চরিত্রে কৈ ? শৈশবে ঠাকুরের নিবেদিত অন্নে অরুচি -এসময়কার একটা অদ্ভুত কথা আছে। অনুমান চারি-পাঁচ বৎসর বয়সের সময় আমি কোন মতেই ঠাকুরদের নিবেদিত অন্ন আহার করিতে চাহিতাম না । ব্রাহ্মণপণ্ডিতের বাটীতে এটা একটা ভয়ানক কথা । কে যে আমার মাথাতে এ সংকল্প ঢুকাইয়া দিয়াঁছিল, তাহা বলিতে পারি না ।