পাতা:আত্মচরিত (২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৮৯,৯০ ] শিক্ষাপ্রণালীর সংস্কার সম্বন্ধে বহুকাল পূর্বের চিন্তা ৪৪৩ দিয়া তার পেট টিপিতে লাগিলাম ; সে হাসিতে লাগিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “বল ত, কি দিয়ে ভাত খেয়েছ ?” তখন সে ভাত, ডাল, চড়ু চড়ি প্রভৃতি তরকারির উল্লেখ করিতে লাগিল ; কিন্তু মাছের নাম করিল না। আমি মনে করিলাম, খুব সম্ভবতঃ মাছ খাইয়াছে, কেবল নাম করিতে । ভুলিয়া যাইতেছে। বলিলাম, “তুমি আর-একটা জিনিস খেয়েছ, আমাকে বলছি না কেন ? তুমি মাছ খেয়েছ।” তখন তার বড় আশ্চর্য বােধ হইল। সে মনে করিল, আমি পেটের বাহিরে অঙ্গুলি দিয়া মাছ খাওয়া ধরিলাম কিরূপে ? সে হাসিয়া বলিল, “তুমি জানলে কি করে ?” আমি বলিলাম—“আঁ। খোক, আমি পেটে আঙ্গুল দিয়ে মাছ খাওয়া ধরতে পারি, তা বুঝি জানতে না ?” এইরূপে যখন দেখিলাম সে একেবারে ভয়-ভাঙ্গা হইয়াছে, তখন তার বই খান খুলিয়া তার সম্মুখে রাখিয়া বলিলাম, “দেখ, তুমি খারাপ ছেলে, আর আমি ভাল ছেলে ।” সে জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ?” আমি উত্তর করিলাম, “আমি পড়তে পারি, তুমি পড়তে পার না ; এই দেখ আমি পড়ি।” এই বলিয়া ক খ গ ঘ করিয়া পড়িয়া চলিলাম। সে আমাকে পড়িতে দেয় না, বলিল “আমিও পড়িতে পারি।” আমি বলিলাম, *আচ্ছা পড়া।” তখন সে জোরে জোরে ক খ গ ঘ করিয়া পড়িয়া চলিল । অবশেষে আমি তাহাকে সর্বনিম্ন শ্রেণীতে (তাহার ক্লাসে) লইয়া গেলাম । গিয়া পণ্ডিত মহাশয়কে বলিলাম, “দেখুন, আপনি বলছিলেন, ও পড়' বললেই কাদে, কিন্তু আমার কাছে ত বেশ পড়িল ।” চাহিয়া দেখি, পণ্ডিত মহাশয়ের পাশ্বে একগাছি চেটাল বাকারি রহিয়াছে ; কোনও ছেলে নী পড়িলে বা অবাধ্য হইলে তাহার পৃষ্ঠে, বা তাহাকে চিত করিয়া শোয়াইয়া তাহার পেটে, ঐ বাকারি পড়ে। আমি বলিলাম, “ও বাকারি দেখলে ওর স্বাৰা হয়ত কাঁদে, ও ত কাঁদবেই। ও বাকারি আপনাকে ফেলে দিতে হবে।” তিনি বলিলেন, “তা হলে আর পড়াশোনা হবে না।”