পাতা:আত্মচরিত (২য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার মা, বড়পিসী, পিসতুতো দিদী, বিবাহ-বাড়ীর লোকেরা আসিয়া। আমাকে ঘুেরিয়া ফেলিয়া বলিতে লাগিলেন, “ওরে । পালা পালা, মার খাবার জন্যে কেন দাড়িয়ে থাকিস!” আমি বলিতে লাগিলাম, “না, আমি যাব না, বাবা যে আমাকে দাড়িয়ে থাকতে বলে গিয়েছেন।” এই বলিয়া প্রায় আধা ঘণ্টাকাল দাড়াইয়া রহিলাম। ওদিকে বাবা আপনার ছড়িাগাছা না পাইয়া, কি দিয়া মারিবেন তাহাই খুজিয়া বেড়াইতেছেন। অবশেষে আর কিছু না পাইয়া একখানা চেলা কাঠ লইয়া উপস্থিত হইলেন। সেই কাঠ লইয়া যখন আমাকে মারিতে আসিলেন, তখন বড়পিসী আমার ও বাবার মধ্যে আসিয়া পড়িলেন। বলিলেন, “ওরে ডাকাত ! দে কাঠ দে। ওই কাঠের বাড়ী মারলে কি ছেলে বঁাচ বে!” এই বলিয়া বাবার হাত হইতে কাঠ কাড়িয়া লইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। দুই ভাই বোনে হুটোপুটি লাগিয়া গেল। বাবা বড়পিসীকে এরূপ এক ধাক্কা মারিলেন যে তিনি তিন চারি হাত দূরে মাটিতে পড়িয়া গেলেন। তখন আমার মা প্রস্তরের মূর্ত্তির ন্যায় অদূরে দণ্ডায়মান ; সাড়া নাই, শব্দ নাই, নড়া নাই, চড়া নাই। বাবার সহিত চােখোচােথি হওয়াতে তিনি বলিলেন, “তুমি আমাকে দেখা কি ? ছেলে মেরে ফেলতে হয় মেরে ‘ফেলো, আমি এক পা-ও নড়বে না।” বাবা বলিলেন, “আচ্ছ। তবে দ্যাখো৷ ” এই বলিয়া সেই চেলা কাঠ দিয়া আমাকে মারিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তখন আরো কেহ কেহ আমাকে বঁাচাইবার জন্য আসিয়া পড়িয়াছিলেন, কিন্তু তঁহাদের মাথায় ও পিঠে চেলাকাঠি পড়াতে কিছু করিয়া উঠিতে পারিলেন না। চেলাকাঠের কয়েক ঘা খাইয়াই আমার মাথা ঘুরিতে লাগিল। আর মানুষ চিনিতে পারি না। বোধ হইতে লাগিল, আমার চারিদিকে মুখগুলো ঘুরিতেছে। তৎপরেই আমি অচেতন হইয়া পড়িয়া গেলাম। :