পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮৬২-৬৭ ] মহেশ চৌধুরী নহাশয়ের ভবনে বাস r) “ভাটবাবু।–র্তাহারা আমাকে ‘ভট’ ‘ভট’ করিগা ডাকিতেন। ইহার একটু ইতিবৃত্ত আছে। আমার স্বগ্রামের অল্পশিক্ষিত এক জন ব্রাহ্মণ যুবক হঁহাদের ভবনে বাসকালে এক ধার আমাকে এক পত্র লিখিলেন। তাহাতে আপনার নাম স্বাক্ষর করিবার সময় ‘ভট্টাচার্য্যের” পরিবর্তে ‘ভট্টীয্য” লিখিয়াছিলেন। তাহা লইয়া আমাদের মধ্যে খুব হাসাহাসি পড়িয়া গেল। তদবধি আমারও উপাধি ভট্টাচার্য্য বলিয়া বাড়ীর লোকে আমাকে ‘ভট্টীয্য’। ‘ভট্টীয্য’ বলিতে লাগিলেন । ভট্টীয্যটা ক্রমে ‘ভট’ হইয়া দাড়াইল। অবশেষে চাকর বাকর সকলে ‘ভট বাবু ‘ভট্ট বাবু বলিতে আরম্ভ করিল। বাড়ীর কর্ত্তাদের মুখে এই ‘ভট’ নামটি আমার মিষ্ট লাগিতা। কারণ তাহাতে অকপট স্নেহ ও আত্মীয়তা প্রকাশ পাইত। ভঁড়ারের ভার।--তঁাহারা আমাকে কিরূপ আপনার লোক ভাবিতেন, তাহার একটা দৃষ্টান্ত এই স্থানেই দেওয়া ভাল। তঁহারা এক বার তঁহাদের ভাড়ারের চাবি আমাকেই দিলেন। বলিলেন, “প্রাতে পড়িতে বসিবার পূর্বে তুমি ভাড়ারের দোর খুলিয়া চাকরদিগকে ডাকিয়া, নিজের চোখে দেখিয়া সমুদয় জিনিসপত্র বাহির করিয়া দিয়া, পড়িতে বসিবে ; চাবি তোমার কাছেই থাকিবো।” সেই বিস্তীর্ণ পরিবারের ভাড়ার এক বৃহৎ ব্যাপার ছিল। ৬০৭০ জন খাবার লোক ; ১০১৫ জন চাকর ; ৪/৫টা ঘোড়া ; ৮,১০টা গরু বাছুর। মানুষদের খাবার চাল ডাল তেল নুন, ঘোড়ার দানা ভূষি প্রভৃতি, গরুদের ভূষি খইল কলাই প্রভৃতি, সমুদয় সেই ভাড়ারে থাকিত। প্রতি দিন কোন জিনিস কি পরিমাণ দিতে হইবে, তাহা একটা কাগজে লিখিয়া, তঁাহারা ভাড়ারের মধ্যে উহা লাটুকাইয়া দিয়াছিলেন। আমি প্রাতে গিয়া, ভাড়ারের দ্বার খুলিয়া চাকরদিগকে ডাকিয়া, সমুদয় জিনিস। ওজন করিয়া দিতাম। দিয়া চাবি লইয়া গিয়া উপরে পড়িতে বসিতাম। তার পর সমস্ত দিন আমার সঙ্গে ভাড়ারের সম্পর্ক থাবিত না। ঐ জিনিস পত্রের সঙ্গে চাকর বাকরের তামাকও দেওয়া হইত।