পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ৪র্থ পরিঃ সে বার প্রতিজ্ঞা করিয়া গেলাম যে আর ঠাকুর পূজা করিব না। গিয়াই মাকে সে সঙ্কল্প জানাইলাম। মা ভূয়ে অবশ হইয়। পড়িলেন। বুঝিলেন, একটা মহা সংগ্রাম আসিতেছে। আমাকে অনেক বুঝাইলেন ; অনেক অনুরোধ করিলেন ; আমি কোনও মতেই প্রস্তুত হইতে পারিলাম না । “ধর্ম্মে প্রবঞ্চনা রাখিতে পারিব না” বলিয়া করযোড়ে মার্জনা ভিক্ষা করিলাম। অবশেষে সেই সঙ্কল্প যখন বাবার গোচর করা হইল, তখন আগ্নেয় গিরির অগ্ন্যুদগমনের ন্যায় তাহার ক্রোধাগ্নি জ্বলিয়া উঠিল। তিনি কুপিত খুঁইয়া আমাকে প্রহার করিয়া ঠাকুরঘরের দিকে লইয়া যাইবার জন্য লাঠি হস্তে ধাবিত হইয়া আসিলেন। আমি ধীর ভাবে বলিলাম, “কেন বৃথা আমাকে প্রহার করিবেন ? আমি অকাতরে আপনার প্রহার সহ করিব। আমার দেহ হইতে এক একখানা হাড় খুলিয়া লইলেও আর আমাকে ওখানে লাইতে পরিবেন না ।” এই কথা শুনিয়া ও আমার দৃঢ়তা দেখিয়া তিনি হঠাৎ দাড়াইয়া গেলেন, এবং প্রায় অদ্ধ ঘণ্টা কাল কুপিত ফণীর ন্যায়:ফুলিতে লাগিলেন। অবশেষে আমাকে পূজার কাজ হইতে নিস্কৃতি দিয়া নিজে পূজা করিতে বসিলেন। সেই দিন হইতে আমার মূর্ত্তি পূজা রহিত হইল। আমি সত্যস্বরূপের উপাসক হইলাম। কিন্তু আমাদের পারিবারিক আন্দোলন গ্রামবাসী আত্মীয় স্বজনের মধ্যে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল । আমাকে সকলেই নির্য্যাতন করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হইলেন। তৎপরে বাবা আমাকে গ্রামস্থ ব্রাহ্মদিগের সহিত মিশিতে নিষেধ করিতে লাগিলেন । আমি অন্য সময়ে মিশিতাম না ; কিন্তু যেদিন তঁাহারা সকলে উপাসনা করিবেন বলিয়া সংবাদ দিতেন, সেদিন বাবা গাত্রোখান করিবার পূর্বেই গিয়া উপাসনাতে যোগ দিতাম ; আসিয়া তিরস্কার ও গঞ্জনা সহ কারিতাম। তখন কেহ ব্রহ্মোপাসনা করিবে শুনিলে চারি পাঁচ মাইল হঁটিয়া” গিয়া যোগ দেওয়া আমার পক্ষে কিছুই কষ্টকর ছিল না।