পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২২৪

○ ゲゲ শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ৭ম পরিঃ হিন্দু কলেজের বারাণ্ডাতে দপ্তরীদের একটা টেবিল পড়িয়া থাকিত । রাত্রে তাহাতে জিনিসপত্র কিছু থাকিত না। রাত্রে আহারের পর একখানা পুস্তক লইয়া সেখানে গিয়া সেই পুস্তক মাথায় দিয়া টেবিলে শুইয়া বেশ নিদ্রা যাইতাম । দিঘীর মাঠের হাওয়ায় বেশ নিদ্রা হইত। প্রাতে আসিয়া স্নান করিয়া কেশব বাবুর উপাসনাতে যোগ দিতাম, বন্ধুদের সহিত আহার করিতাম, আহারান্তে মহিলা স্কুলে পড়াইতাম, অপরাহে বন্ধুদের সহিত ধর্ম্মালাপে কাটাইতাম, সন্ধ্যার পর আহার করিয়া আবার হিন্দু কলেজের বারাণ্ডায় টেবিলের উপর গিয়া শুইতাম। সেখানে আমার সময় বড় ভাল যাইত। গভীর রাত্রের নির্জনে অনেক দিন ঈশ্বর চিন্তাতে যাপন করিতাম। রজনী প্রভাত হইবার পূর্বেই আমাকে উঠিতে হইত। উষাকালের সেই ব্রাহ্মমুহূর্ত্ত আমার পক্ষে বড়ই স্পহণীয় ছিল। আমি জানিতাম, আমি যে গোলদিঘীর ধারে টেবিলের উপরে রাত্রি যাপন করি, তাহ কেহ জানেন না। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে প্রসন্নময়ী ও বিরাজমোহিনী উভয়েই সে কথা জানিতে পারিলেন। শুইবার স্থানাভাবে কলেজের বারাণ্ডায় পড়িয়া থাকি শুনিয়া প্রসন্নময়ী কঁাদিতে লাগিলেন । বিরাজমোহিনী মনে করিলেন, তিনিই এই সমুদয় কষ্টের কারণ, ইহা ভাবিয়া ঘোর বিষাদে পতিত হইলেন ; তঁাহারও চক্ষে জলধারা বহিতে লাগিল । নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আগমন -এই সময় আবার আমার শ্রদ্ধেয় বন্ধু নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় কৃষ্ণনগর হইতে কর্ম্ম ছাড়িয়া প্রচারক দলে যোগ দিবেন বলিয়া আসিলেন। তঁহার আসিবার কথা যেদিন স্থির হয়, সেদিন কান্তিচুদ্র মিত্র মহাশয়ের সহিত কেশব বাবুর যে কথোপকথন হয়, তাহাতে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেদিনের কথা কখনই ভুলিব না। কান্তি বাবু আসিয়া বলিলুেন, “নিগেন্দ্র আসিতে চাহিতেছেন, কি করা যাবে ?”