পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘२७8 শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত [ ১০ম পরিঃ . যাহা হউক, এক দিন প্রাতে আমার ভবনের দ্বারে একখানি গাড়ি আসিয়া লাগিল। প্রসন্নময়ী জানালা হইতে দেখিয়া দৌড়িয়া আসিয়া আমাকে সংবাদ দিলেন, “বাবা ও মা আসিয়াছেন।” মা উপরে আসিলেন, কিন্তু বাবা আর সে ভবনে প্রবেশ করিলেন না । মা আমার রোগ শয্যার পাশ্বে আসিয়া কঁাদিয়া বসিয়া পড়িলেন। “বাবা আসিলেন না কেন ?” জিজ্ঞাসা করাতে বলিলেন, তিনি কবিরাজ ডাকিতে গিয়াছেন। অনুসন্ধানে জানিলাম, বাবা আমার চিঠি পাইয়া, মায়ের গহনা বন্ধক দিয়া টাকা লইয়া আমার চিকিৎসার জন্য আসিয়াছেন ; বাড়ীতে প্রবেশ করিবেন না ; আমার জ্ঞাতি দাদা হেমচন্দ্র বিদ্যারত্ন মহাশয়ের বাসাতে থাকিয়া আমার চিকিৎসা করাইবেন । যথাসময়ে কবিরাজ আসিলেন । বাবা তাহাকে আমার ভবনে প্রবেশ করাইয়া দিয়া নিজে পথ পাশ্বে দোকানে বসিয়া রহিলেন । কবিরাজ আমাকে দেখিয়া গেলে তঁাহার মুখে সমুদয় শুনিলেন। র্তাহার এই ব্যবহারে আমার চক্ষে কত জল পড়িল। তৎপূর্ব্বে এই আট বৎসর সংসারের আপদ বিপদে জ্ঞাতসারে আমার এক পয়সাও সাহায্য লন নাই। পরন্তু যদি কখনও জানিতে পারিয়াছেন যে, মায়ের হাত দিয়া গোপনে কিছু অর্থ সাহায্য করিতে চাহিতেছি, তখন তুমুল কাণ্ড করিয়াছেন। তিনি আমাকে একেবারেই ত্যাজ্য পুত্র করিয়াছিলেন। কিন্তু সেই পতিত পুত্র যখন বিপদে পড়িয়া স্মরণ করিল, তখন আর সুস্থির থাকিতে পারিলেন না। দরিদ্র ব্রাহ্মণ, সম্বল নাই। যে সম্বল হাতের কাছে পাইলেন, তাহাই লইয়া ছুটলেন। কি উদারত ! এই উদারতা তঁহার প্রকৃতির এক মহা সদগুণ। তিনি আসিয়া কয়েক দিন থাকিয়া, এক স্বতন্ত্র বাড়ী ভাড়া করিয়া মাকে আমার পরিচর্য্যার জন্য সেই বাড়ীতে রাখিয়া গেলেন। মাতা ঠাকুরাণী বিরাজমোহিনীকে ও আমাকে লইয়া সেই বাড়ীতে রহিলেন।