পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sv8-a IV ] মাতার কাছে পাঠ শিক্ষা করিয়াছি। এক এক দিন স্কুলে পৌঁছিলেই পণ্ডিত মহাশয় আমার কাপড়খানি খুলিয়া মাথায় বাধিয়া দিতেন ; এবং পেট টিপিয়া বলিতেন, “আফিং খোর বামণ, তোমার মা তোমাকে কত ভরি। আফিং খাওয়ান ?” ফলতঃ পণ্ডিত মহাশয় আমাকে বড় ভালবাসিতেন ; তাহার কারণ এই, আমি ক্লাসে পড়াতে সর্ব্বদা প্রথম কি দ্বিতীয় স্থানে থাকিতাম । তাহার কারণ ছিলেন। আমার মা । আমি মায়ের কাছে পড়া শিখিয়া যাইতাম। তবে আমার এইটুকু প্রশংসার বিষয় যে পড়াতে আমার মনোযোগ ছিল। মা প্রাতে উঠিয়া গৃহকর্ম্মে ব্যস্ত হইতেন । আমি বইখানা হাতে লইয়া, “মা, এটা কি ?” “মা, এ কথার অর্থ কি ?” এই বলিতে বলিতে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরিতাম। একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। শিশুশিক্ষাতে আছে, আী ও ঢ-য়ে য-ফলা,-উদাহরণ “আঢ্য লোক সদা সুখী”। মা ফিরিয়া বলিলেন, “ওটা আঢ্য” । ইহাতে আমি সন্তুষ্ট হইতাম না। প্রশ্ন, “আঢ্য কাকে বলে মা ?” উত্তর, “আঢ্য বলতে বড় মানুষ, যেমন গোপাল বাবু” (গ্রামের এক জন জমিদার)। স্কুলে পণ্ডিত মহাশয় যেই ‘আঢ্য’ শব্দ বানান করিতে বলিলেন, অমমি সর্বাগ্রে আমি বানান করিলাম, “আ ও ঢ-য়ে য-ফলা-আঢ্য, আঢ্য বলতে বড় মানুষ, যেমন গোপাল বাবু।” পণ্ডিত মহাশয় শুনিয়াই হাসিয়া উঠিলেন। বলিলেন, “হাঃ হাঃ—ও তুই কোথায় পেলি রে ?” উত্তর, “কেন, আমার মা ব’লে দিয়েছে।” এইরূপে মায়ের গুণে কোনও বালক আমাকে আঁটিয়া উঠিতে পারিত না । ইহার এক ফল এই হইল যে অন্যান্য বালকের বাড়ীতে গিয়া নিজ নিজ মায়ের কাছে আবদার আরম্ভ করিল, “শিবের মা কেমন পড়া ব’লে দেয়। তুই কেন দিস।। না ?” মায়েরা বলিতে লাগিলেন, “আরো ম’লে, আমি কি লেখা পড়া জানি ? শিবের মা ত ভাল জ্বালা ঘটালে।” – এইরূপে আমার মা একটু লেখাপড়া জানিয়া ঘরে ঘরে গোল বাধাইয়া দিয়াছিলেন।