পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Vo শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত * [ পরি থাকে। তাহারা সংসারের খারাপটা সহজে দেখিতে পায় না ; সৎপথে থাকিয়াই বদ্ধিত হয়। “অকৃত্রিম’ কথাটি এই জন্য ব্যবহার করিতেছি যে, অনেক গৃহে এমন অনেক পিতামাতা দেখিয়াছি, র্যাহারা ইংরাজ লেখক ডিকেন্সের (Dickens ) বর্ণিত গুরুমহাশয়ের ন্যায় নিজেরা মাংসখণ্ড মুখে পুরিয়া চিবাইতে চিবাইতে শিশুদিগকে উপদেশ বলেন, “দেখ শিশুগণ, লোভ দমন চরিত্রের উন্নতির প্রথম সোপান ।” অর্থাৎ তঁাহারা জানিয়া রাখিয়াছেন, শিশুদিগকে মুখে উপদেশ দেওয়া পিতামাতার কর্ত্তব্য ; মুখে বড় কথা বলিতে হইবে, মুখে অধর্ম্মের প্রতি ঘৃণা ও সাধুতার প্রতি আদর দেখাইতে হইবে ; মুখে সত্য বচনে সত্য ব্যবহারে প্রবৃত্ত করিতে হইবে, কার্য্যতঃ হউক আর না হউক । আমি এরূপ এক জন লোকের কথা জানি, যিনি সন্তানদিগকে এইরূপ মৌখিক উপদেশ দিবার নিয়ম রাখিয়াছিলেন ; মুখে বড় বড় উপদেশ দিতেন এবং তাহাদিগকে লইয়া ঈশ্বরের নাম করিতেন। কিন্তু এক দিন কোনও ভদ্রলোকের বাগানের মালী নিজ প্রভুর কতকগুলি গাছ চুরি করিয়া বেচিতে আনিল ; স্বল্প মূল্যে সেগুলি পাইয়াই তিনি কিনিতে বসিলেন। তখন উপস্থিত সমাগত এক জন ভদ্রলোক তঁহাকে স্মরণ করাইয়া দিয়া বলিলেন, “মহাশয়, বুঝিতে পারিতেছেন না, চুরি করা গাছ ; নতুবা কি এত সস্তা দেয় ?” তিনি বলিলেন, “তাহা আমি দেখিতে গেলাম কেন ? আমার দ্বারে গাছ আনিয়াছে, আমি সস্তাতে পাইতেছি, লইতেছি । আমি ত উহাকে প্রলোভন দিয়া আনি নাই।” এই বলিয়া গাছগুলি লাইলেন। আমি শুনিয়াছি, তঁাহার পুত্রেরা সেখানে উপস্থিত ছিল । তৎপরে কত বার ভাবিয়াছি, ইহা কিছুই আশ্চর্য্য নয় যে তঁহার পুত্রদের অনেকে উত্তর কালে বদমায়েস হইয়াছে। বর্তাহার মৌখিক উপদেশের কোনও কাজ হয় নাই ।