পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিষ্ট ] , জননীর ধর্ম্মভাব 8r9 যৌবনে যখন আমি ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করিলাম, তখন মার প্রতীতি জন্মিল যে, তাহার। পূর্ব্বজন্মের কোন পাপের জন্যই সন্তানের দুর্ম্মতি ঘটয়াছে। তিনি আমার প্রতি কৰ্কশ ব্যবহার করিলেন না, কিন্তু এই বিশ্বাসের বশবর্ত্তিনী হইয়া তিনি তঁহার জপ তপ ব্রত নিয়মের মাত্রা অসম্ভব রূপে বাড়াইয়া দিলেন। দৈবজ্ঞ ব্রাহ্মণ পাইলেই আমার ঠিকুজী কোষ্ঠী তাহাকে দেখাইতেন, এবং যে ব্রাহ্মণ যে কিছু ব্রত বা ধর্ম্মানুষ্ঠান করিতে বলিতেন, তাহাই করিতেন। এইরূপে অনেক অর্থ ব্যয় হইয়া গেল, এবং তঁহার শরীর ভাঙ্গিয়া পড়িল ; বহু বার চিকিৎসার জন্য তঁহাকে কলিকাতাতে আনিতে হইল। অবশেষে এক জন দৈবজ্ঞ ব্রাহ্মণ আমার কোষ্ঠী দেখিয়া বলিলেন যে, আমার কোষ্ঠীতে আছে, কখনই আমার দেবতা ব্রাহ্মণে মতি হইবে না। তখন হইতে জননী নিস্তার পাইলেন। পিতা ও মাতাতে কি প্রভেদ । পিতা আমাকে মারিবার জন্য গুণ্ডা ভাড়াতে কয়েক বৎসরে ২০২২ টাকা ব্যয় করিলেন ; আর জননী আমার জন্য ব্রত নিয়মে প্রায় ঐ পরিমাণ অর্থ ব্যয় করিলেন। গত বৎসর ( ১৯০৭ সালের জুন মাসে) গুরুতর পীড়াতে আমি যখন মৃত্যু শয্যাতে শয়ান ছিলাম, তখন জননী আসিয়া কিছু দিন আমার নিকট ছিলেন। তখন প্রতি দিন প্রাতে নিজের পূজা সারিয়া, আমাকে মন্ত্রপূত জল একটু পান করাইতেন ; প্রপিতামহের জপের মালা আমার বক্ষে এবং নিজের পদধূলি আমার মস্তকে দিতেন। আমার বন্ধুগণ দমিয়া গিয়াছিলেন, কিন্তু আমার জননী দামেন নাই। তখন তঁাহার দৃঢ়চিত্ততা দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হইয়াছিলেন। তিনি বিশ্বাস করিতেন, তঁহার প্রার্থনা ও আশীর্ব্বাদে আমি সারিয়া উঠিব। এই স্বাভাবিক ধর্ম্মভাব তাহার প্রকৃতির প্রধান লক্ষণ ছিল। তিনি গয়া কাশী বৃন্দাবন জগন্নাথক্ষেত্র প্রভৃতি সমুদয় প্রধান প্রধান তীর্থ স্থান