পাতা:আত্মচরিত (৩য় সংস্করণ) - শিবনাথ শাস্ত্রী.pdf/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86 শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মচারিত , f

কর্ত্তব্যকার্য্যে তঁহার এমনি গাঢ় অভিনিবেশ ও চিত্তের এরূপ অদ্ভুত একাগ্রতা দেখিতাম যে, তিনি যখন বাড়ীতে থাকিতেন, তখন দেখিলে মনে হইত। যে সোমপ্রকাশ লেখা ভিন্ন তঁাহার। পৃথিবীতে অন্য কার্য্য নাই ; আবার কলেজে গিয়া যখন বসিতেন, তখন দেখিলে মনে হইত। যে কলেজে পড়ান ছাড়া তাহার পৃথিবীতে অন্য কার্য্য নাই। বাস্তবিক, তিনি যে কাজটা এক বার কর্ত্তব্য বলিয়া ধরিতেন, তাহ সমগ্র হৃদয়ের সহিত ধরিতেন ; ক্ষতিকে ক্ষতি বলিয়া জ্ঞান করিতেন না, এবং সে কার্য্য উদ্ধার না করিয়া ছাড়িতেন না। ইহার দুই একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করিতেছি। এক বার তিনি এক দিন প্রাতে প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিয়া আসিতেছেন, এমন সময় গোপজাতীয়া একটি বিধবা যুবতী কঁাদিতে কঁাদিতে সেই পথ দিয়া চলিয়াছে। বড় মামা তাহার ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে সে বলিল যে, গ্রামের এক জন ধনী লোক তাহাকে দাসী করিয়া বাড়ীতে রাখে ; সেই অবস্থাতে তাহাকে প্রলোভন দেখাইয়া বিপথে লইয়া যায় ; এবং তৎপরে তাহাকে সসত্ত্বা দেখিয়া তাড়াইয়া দিয়াছে। সে তখন নিরুপায়। শুনিয়া বড় মামার ক্রোধাগ্নি জলিয়া উঠিল । তিনি প্রথমে সেই ধনীর নিকটে লোক পাঠাইয়া ঐ হতভাগিনীর ভরণ পোষণের উপযুক্ত অর্থ সংগ্রহ করিবার চেষ্টা করিলেন। তাহাতে অকৃতকার্য্য হইয়া : রাজদ্বারে অভিযোগ উপস্থিত করিলেন, নিজে ব্যয় দিয়া মোকদ্দমা চালাইবার যোগাড় করিলেন । এই অবস্থাতে বোধ হয় ঐ ধনী ব্যক্তি সেই স্ত্রীলোককে যাবজ্জীবন মাসে ৪২ টাকা করিয়া দিতে রাজি হইল । তৎপরে বিধবার গর্ভের সন্তানটি যাহাতে নষ্ট না হয়, মামা তাহার উপায় করিলেন, এবং মাতা পুত্রের রক্ষার বন্দোবস্ত করিয়া দিলেন। আর একটি দৃষ্টান্ত এই। গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হইয়া মাতুল মহাশয় অনুভব করিতে লাগিলেন যে, গ্রামে একটি ভাল। ইংরাজী স্কুল থাকা আবশ্যক। তৎপূর্বে গ্রামের জমিদার বাবুদের স্থাপিত একটি স্কুল ছিল।