পাতা:আত্মজীবনী ও স্মৃতি-তর্পন - জলধর সেন.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R আত্মজীবনী ও স্মৃতি-তৰ্পণ কিছু ধনসম্পত্তি ছিল, সমস্তই তিনি এই শ্রাদ্ধে ব্যয় ক’রে ফেলেছিলেন ; সেই থেকেই আমাদের এই দারিদ্র্যের সূত্রপাত । পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের কোন উপায় না দেখে, আমার জেঠা মহাশয় রাজসাহী জেলার গালিমপুরের ওয়াটসন কোম্পানীর রেশমের কি নীলের কুঠীর গোমস্তাগিরি চাকুরী নিয়ে চলে যান। সেই চাকুরী। তিনি অনেকদিন করেছিলেন। আমার পিতার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে গালিমপুর থেকে ফিরে এসে, আর তিনি চাকুরীতে যান নি। আমার পিতা সামান্য বাঙ্গালা লেখাপড়া শিখে এবং হিসাবকিতাবে দুঃস্ত হয়ে, আমাদেরই গ্রামের রামমোহন প্রামাণিকের কাপডের দোকানে সামান্য চাকুরীতে প্রবেশ করেন । প্রথম প্রথম তার কাজ ছিল, দোকানে ধারা কাপড় কিনতে আসত, তাদের তামাক সেজে দেওয়া আর দোকানে গোমস্তার ফরমায়েস মন্ত তাকের উপর থেকে কাপড় নামিয়ে দেওয়া । তখন তিনি মাসে বেতন পেতেন দেড় টাকা, আর প্রত্যহ এক পয়সার জলখাবার । সকালে উঠে” হাত-মুখ ধুয়ে তিনি দোকানে যেতেন, ১১॥০-১২টায় বাড়ী ফিরতেন, তারপর আহারাদি শেষ করে’ দুটার সময়ে দোকানে যেতেন, ফিরতে রাত্রি ৮১টা বেজে যেত। কখন কখনও ১০টা হ’ত। পূজার সময়ে বেচাকেনার ধুম পড়ে? গেলে, সারা রাত্রি দোকানে থাকতে হ’ত । এই ভাবে কিছুদিন যাবার পর দেশে বিলাতী কাপড়ের আমদানী সুরু হ’ল। এর পূর্বে আমাদের দেশের কাপড়ের দোকানগুলিতে মোটেই বিলাতী কাপড় বিক্রী হ’ত না । বাবা যে দোকানে কাজ করতেন, সেই দোকানের মালিক রামমােহন প্রামাণিক মহাশয় যখন শুনতে পেলেন যে, কলকাতার বাজারে বিলাতী কাপড় আমদানী হচ্ছে, তা’ সস্তা, তখন তিনি বিলাতী। কাপড় আমদানী করার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্তু সে সময় রেল হয়। নি, আমাদের দেশ থেকে কলকাতায় যেতে হ’লে নৌকায় যেতে হয়, আর সেও একদিন দু’দিনের পথ নয়। আমাদের গ্রাম থেকে কলকাতায় পৌছতে গেলে তখন ১৪/১৫ দিন সময় লাগত, আর পথেও নানা বিপদের সম্ভাবনা ছিল। শুধু সম্ভাবনা কেন, অতি কম নৌকাযাত্রীই চােরডাকাতের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভ ক’রে যেতে পারতেন। রাণাঘাটের বিশ্বনাথবাবু প্রসিদ্ধ ডাকাত ছিল। তার দলের ডাকনাম ছিল বিশে ডাকাতের দল। বিশে বাগদীর দক্ষিণহস্ত ছিল বদ্যিনাথ। তাদের এমন দুৰ্দান্ত প্রতাপ ছিল যে, রাণাঘাটের চুলী নদীর