পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নানাবর্ণগন্ধময়। প্রদীপের মতাে
সমস্ত সংসার মাের লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তােমারি শিখায়
তােমার মন্দির মাঝে। ইন্দ্রিয়ের দ্বার
রুদ্ধ করি যােগাসন, সে নহে আমার।
যে কিছু আনন্দ আছে দৃশ্যে গন্ধে গানে
তােমার আনন্দ রবে তারি মাঝখানে।
মােহ মাের মুক্তিরূপে উঠিবে জ্বলিয়া,
প্রেম মাের ভক্তিরূপে রহিবে ফলিয়া।

 আমি বালকবয়সে ‘প্রকৃতির প্রতিশােধ’ লিখিয়াছিলাম— তখন আমি নিজে ভালো করিয়া বুঝিয়াছিলাম কি না জানি না— কিন্তু তাহাতে এই কথা ছিল যে, এই বিশ্বকে গ্রহণ করিয়া, এই সংসারকে বিশ্বাস করিয়া, এই প্রত্যক্ষকে শ্রদ্ধা করিয়া আমরা যথার্থভাবে অনন্তকে উপলব্ধি করিতে পারি। যে জাহাজে অনন্তকোটি লােক যাত্রা করিয়া বাহির হইতেছে তাহা হইতে লাফ দিয়া পড়িয়া সাঁতারের জোরে সমুদ্র পার হইবার চেষ্টা সফল হইবার নহে।

হে বিশ্ব, হে মহাতরী, চলেছ কোথায়?
আমারে তুলিয়া লও তােমার আশ্রয়ে।
একা আমি সঁতারিয়া পারিব না যেতে।
কোটি কোটি যাত্রী ওই যেতেছে চলিয়া—
আমিও চলিতে চাই উহাদেরি সাথে।
যে পথে তপন শশী আলাে ধরে আছে
সে পথ করিয়া তুচ্ছ, সে আলো ত্যজিয়া
আপনারি ক্ষুদ্র এই খদ্যোত-আলােকে
কেন অন্ধকারে মরি পথ খুঁজে খুঁজে।

২৬