পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তো তাকে সত্য মিলনে পৌঁছিয়ে দিলে। প্রলয়ের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির পথ। তাই উপনিষদে আছে, তিনি তাপের দ্বারা তপ্ত হয়ে এই সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলেন। আমাদের আত্মা যা সৃষ্টি করছে তাতে পদে পদে ব্যথা। কিন্তু তাকে যদি ব্যথাই বলি তবে শেষ কথা বলা হল না, সেই ব্যথাতেই সৌন্দর্য, তাতেই আনন্দ।

 যে বােধে আমাদের আত্মা আপনাকে জানে সে বােধের অভ্যুদয় হয় বিরােধ অতিক্রম করে, আমাদের অভ্যাসের এবং আরামের প্রাচীরকে ভেঙে ফেলে। যে বোধে আমাদের মুক্তি, দুর্গং পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি― দুঃখের দুর্গম পথ দিয়ে সে তার জয়ভেরী বাজিয়ে আসে― আতঙ্কে সে দিগদিগন্ত কাঁপিয়ে তােলে, তাকে শত্রু বলেই মনে করি, তার সঙ্গে লড়াই করে তবে তাকে স্বীকার করতে হয়― কেননা নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ। ‘অচলায়তনে’ এই কথাটাই আছে।—

 মহাপঞ্চক। তুমি কি আমাদের গুরু।

 দাদাঠাকুর। হাঁ তুমি আমাকে চিনবে না কিন্তু আমিই তােমাদের গুরু।

 মহাপঞ্চক। তুমি গুরু? তুমি আমাদের সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে এ কোন্ পথ দিয়ে এলে। তােমাকে কে মানবে।

 দাদাঠাকুর। আমাকে মানবে না জানি, কিন্তু আমিই তােমাদের গুরু।

 মহাপঞ্চক। তুমি গুরু? তবে এই শত্রুবেশে কেন।

 দাদাঠাকুর। এই তাে আমার গুরুর বেশ। তুমি যে আমার সঙ্গে লড়াই করবে— সেই লড়াই আমার গুরুর অভ্যর্থনা।

 মহাপঞ্চক। আমি তােমাকে প্রণাম করব না।

 দাদাঠাকুর। আমি তােমার প্রণাম গ্রহণ করব না— আমি তােমাকে প্রণত করব।

৬৩