পাতা:আত্মপরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তাই দেশ নিজের সত্তা-প্রমাণেরই খাতিরে অহরহ তাকিয়ে আছে তাদেরই জন্যে যারা কোনো সাধনায় সার্থক। তারা না থাকলেও গাছপালা জীবজন্তু জন্মায়, বৃষ্টি পড়ে, নদী চলে, কিন্তু দেশ আচ্ছন্ন থাকে মরুবালুতলে ভূমির মতো।

 এই কারণেই দেশ যার মধ্যে আপন ভাষাবান প্রকাশ অনুভব করে তাকে সর্বজনসমক্ষে নিজের বলে চিহ্নিত করবার উপলক্ষ রচনা করতে চায়। যেদিন তাই করে, যেদিন কোনো মানুষকে আনন্দের সঙ্গে সে অঙ্গীকার করে, সেদিনই মাটির কোল থেকে দেশের কোলে সেই মানুষের জন্ম।

 আমার জীবনের সমাপ্তিদশায় এই জয়ন্তী-অনুষ্ঠানের যদি কোনো সত্য থাকে তবে তা এই তাৎপর্য নিয়ে। আমাকে গ্রহণ করার দ্বারা দেশ যদি কোনোভাবে নিজেকে লাভ না করে থাকে তবে আজকের এই উৎসব অর্থহীন। যদি কেউ এ কথায় অহংকারের আশঙ্কা করে আমার জন্যে উদ্‌বিগ্ন হন তবে তাঁদের উদ্‌বেগ অনাবশ্যক। যে খ্যাতির সম্বল অল্প তার সমারোহ যতই বেশি হয় ততই তার দেউলে হওয়া দ্রুত ঘটে। ভুল মস্ত হয়ে দেখা দেয়, চুকে যায় অতি ক্ষুদ্র হয়ে। আতশবাজির অভ্রবিদারক আলোটাই তার নির্বাণের উজ্জ্বল তর্জনীসংকেত।

 এ কথায় সন্দেহ নেই যে পুরস্কারের পাত্র-নির্বাচনে দেশ ভুল করতে পারে। সাহিত্যের ইতিহাসে ক্ষণমুখরা খ্যাতির মৌন-সাধন বার বার দেখা গেছে। তাই আজকের দিনের আয়োজনে আজই অতিশয় উল্লাস যেন না করি এই উপদেশর বিরুদ্ধে যুক্তি চলে না। তেমনি তা নিয়ে এখনি তাড়াতাড়ি বিমর্ষ হবারও আশু কারণ দেখি না। কালে কালে সাহিত্যবিচারের রায় একবার উলটিয়ে আবার পালটিয়েও থাকে। অব্যবস্থিতচিত্ত মন্দগতি কালের সব-শেষ বিচারে আমার ভাগ্যে যদি নিঃশেষে ফাঁকিই থাকে তবে এখনি আগাম শোচনা করতে বসা কিছু

৮৫