পাতা:আদর্শ হিন্দু হোটেল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ হিন্দু হোটেল

হইবে। সেখানে একজন রসুয়ে-বামুন বসিয়া আছে, খদ্দেরের লইয়া তাহাকে নির্দিষ্ট স্থানে বসাইয়া দিবার জন্যে। খাইবার, দরমার বেড়া দিয়া দাই ভাগ করা। এক দিকে ফাস্ট ক্লাস, অন্য সেকেন্ ক্লাস। খদ্দের খাইয়া চলিয়া গেলে এই সব টিকিট বেচু। কাছে জমা দেওয়া হইবে-সেগুলি দেখিয়া তহবিল মিলানো ও উচ্ছিষ্ট তারকারীর পরিমাণ তদারক হইবে। রসুয়ে-বামুনেরা চুরি করিতে না?

 চাকর ভিতরে আসিয়া বলিল-মোটে চারজন লোক খদ্দের। দ ওদের ওখানে গেল।

 বেচু চক্কত্তি বলিল-যাক্ গে। তুই আর একটা এগিয়ে যা শান্তিপুর আসবার সময় হ'ল। এই গাড়ীতে দু-পাঁচটা খদ্দের থাকে। আর ভেতরে বামুনকে বলে আয়, শান্তিপুর আসবার আগে যেন আর ভাত না চড়ায়। এক ডেকচিতে এখন চলুক।

 এমন সময় হোটেলের ঝি পদ্ম ঘরে ঢুকিয়া বলিল-পয়সা দেও গ দই নে আসি।

 বেচু বলিল-দই কি হবে?

 পদ্ম হাসিয়া বলিল-একজন ফাস্টো কেলাসে খাবে। আমায় পাঠিয়েছে। দই চাই, পাকা কলা চাই-  বেচু বলিল-কে বল্ তো - খদ্দের? -খদ্দের তো বটেই। পয়সা দিয়ে খাবে। এখনি ওর ভাইপো আসবে দেশ থেকে এই শান্তিপরের গাড়ীতে।

 —না-না-তাকে পয়সা দিতে হবে না। সে ছেলেমানষে, দু দিনের জন্যে আসবে।—তার কাছ থেকে পয়সা কিসের? দইয়ের পয়সা নে যা-

  বেচু একথা কখনো কাহাকেও বলে না, কিন্তু পদ্ম ঝিয়ের অন্য কথা। পদ্ম ঝি এ হোটেলে যা বলে, তাই হয়। তাহার উপর, বলিবার কেহ নাই। সেজন্য দুষ্টু লোকে নানারকম মন্দ কথা বলে। সে-সব কথায় কান দিতে গেলে চলে না।