পাতা:আদায়ের ইতিহাস - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OI আদায়ের বুঝিতে পারিয়া মনটা ত্রিষ্টপের বড় খারাপ হইয়া গেল। টাকা সে নিক, খরচ সে করুক, সেটা ভিন্ন কথা। কিসে টাকা খরচ করিবে, একটু জানিবার অধিকার তার বাপ-মা দাবী করেন। টাকা। যদি সে নষ্ট করিতে চায়? তাও সে করুক। কিছু না বলার চেয়ে সে অনেক ভাল ! এ গোপনতার মানেই স্পষ্ট ভাষায় তার ঘোষণা করা যে, এতদিন যা করিয়াছ, বেশ, করিয়াছ, এখন হইতে আমার সমস্ত বিষয়ে তোমরা মাথা ঘামাইতে আসিও না। শুধু অবিনাশের একটি প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করায় আজ মতের অমিল, অবাধ্যতা আর কলহের চেয়েও বিশ্রী ব্যাপার ঘটিয়া গেল। হাতে দেওয়ার বদলে টাকাটা ত্রিষ্টপ রমেশের সামনে ফেলিয়া দিল । ইচ্ছা করিয়া নয়, মনে অশ্রদ্ধা থাকিলে, সময় বিশেষে আপন হইতেই সেটা প্রকাশ হইয়া যায়। রমেশ বলিল, “শীগগির তোমার টাকা ফিরিয়ে দেব ভাই, এক মাসের মধ্যে । কত যেন হল সব শুদ্ধ ?, টাকাটা ওভাবে ছুড়িয়া দিয়া ত্রিষ্টুপ একটু অনুতাপ বােধ করিয়াছিল, রমেশের অমায়িকতা দিয়া অপমান চাপা দিবার চেষ্টায় আবার তার পিত্ত জ্বলিয়া গেল । “আচ্ছা, আচ্ছা, সে হবে।” তখন উদ্ধত ভঙ্গীতে দাড়াইয়া চোখ পাকাইয়া রমেশ বলিল, “তার মানে ? ও রকম বঁকা করে কথা বলছি যে ?” “বাঁকা করে কি বললাম ?” ‘বুঝি, বুঝি। আমরা ও সব বুঝি। ভাবিছ যে ধার বলে নিচ্ছে, তার মানেই তাই। কাজ নেই ভাই তোমার টাকা নিয়ে আমার, বরং কাবলীওয়ালাকে খাত লিখে দেব ।” দিন সাতেক পরে ত্রিষ্টপ আপিস হইতে বাড়ী ফেরা মাত্র প্রভা একতাড়া নােট হাতে কাছে আসিয়া দাড়াইল। ত্রিষ্টপকে দেখাইয়া নোটের তাড়া হইতে পাঁচিশ টাকার নোট বাছিয়া সামনে ফেলিয়া দিল ।