পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

খানিক পড়ে দাসী একথালা খাবার আনিয়া হাজির করিল। বিজলী নিজের হাতে লইয়া আবার হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া বলিল, মুখ তােল, খাও। এতক্ষণ সত্য তাহার সমস্ত শক্তি এক করিয়া নিজেকে সামলাইতেছিল, এইবার মুখ তুলিয়া শান্তভাবে বলিল, আমি খাব না। কেন? জাত যাবে? আমি হাড়ী না মুচি? সত্য তেমনি শান্তকণ্ঠে বলিল, তা হলে খেতুম। আপনি যা তাই। বিজলী খিলখিল করিয়া হাসিয়া বলিল, হাবুবাবুও ছুরি-ডাের চালাতে জানেন দেখচি। বলিয়া আবার হাসিল, কিন্তু তাহা শব্দ মাত্র, হাসি নয়, তাই আর কেহ সে হাসিতে যােগ দিতে পারিল না। | সত্য কহিল, আমার নাম সত্য, ‘হাবু’ নয়। আমি ছুরি-ছােরা চালাতে কখন শিখিনি, কিন্তু, নিজের ভুল টের পেলে শশাধরাতে শিখেচি। | বিজলীহঠাৎ কি কথা বলিতে গেল, কিন্তু চাপিয়া লইয়া শেষে কহিল, আমার ছোয়া খাবে না। । বিজলী উঠিয়া দাড়াইল। তাহার পরিহাসের স্বরে এবার তীব্রতা মিশিল ; জোর দিয়া কহিল, খাবেই। এই বলছি তােমাকে, আজ না হয় কাল, না হয় দু’দিন পরে খাবেই তুমি। সত্য ঘাড় নাড়িয়া বলিল, দেখুন, ভুল সকলেরই হয়। আমার ভুল যে কত বড়, তা সবাই টের পেয়েছে । কিন্তু আপনারও ভুল হচ্চে। আজ নয়, আগামী জন্মে নয়—কোনকালেই আপনার ছোঁয়া খাব না। অনুমতি করুন, আমি যাই—আপনার নিঃশ্বাসে আমার রক্ত শুকিয়ে যাচ্চে। তাহার মুখের উপর গভীর ঘৃণার এমনি সুস্পষ্ট ছায়া পড়িল যে, তাহা ঐ মাতালটার চক্ষুও এড়াইল না। সে মাথা নাড়িয়া কহিল, ১৭। আঁধারে আলাে-২