পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

ভগ্নস্বর শুনিয়া সত্য বিস্মিত হইল, কিন্তু এই পনর-যােল দিন ধরিয়া যে অভিনয় সে দেখিয়াছে, তাহার কাছে ত ইহা কিছুই নয়। তথাপি সে মুখ ফিরাইয়া দাঁড়াইল। সে-মুখের রেখায় রেখায় সুদৃঢ় অপ্রত্যয় পাঠ করিয়া বিজলীর বুক ভাঙ্গিয়া গেল। কিন্তু সে করিবে কি ? হায় হায় ! প্রত্যয় করাইবার সমস্ত উপায়ই যে সে আবর্জনার মত স্বহস্তে ঝাট দিয়া ফেলিয়া দিয়াছে ! সত্য প্রশ্ন করিল, কি বিশ্বাস করব? বিজলীর ওষ্ঠাধর কঁপিয়া ওঠিল, কিন্তু স্বর ফুটিল না। অশ্রুভারাক্রান্ত দুই চোখ মুহূর্তের জন্য তুলিয়াই অবনত করিল। সত্য তাহাও দেখিল, কিন্তু অশ্রুর কি নকল নাই! বিজলী মুখ না তুলিয়াই বুঝিল, সত্য অপেক্ষা করিয়া আছে ; কিন্তু সেই কথাটা যে মুখ দিয়া সে কিছুতেই বাহির করিতে পারিতেছে না, যাহা বাহিরে আসিবার জন্য তাহার বুকের পাজরগুলাে ভাঙ্গিয়া গুড়াইয়া দিতেছে! | সে ভালবাসিয়াছে। সে ভালবাসার একটা কণা সার্থক করিবার লােভে সে এই রূপের ভাণ্ডার দেহটাও হয়ত একখণ্ড গলিত বস্ত্রের মতই ত্যাগ করিতে পারে কিন্তু কে তাহা বিশ্বাস করিবে! সে যে দাগী আসামী। অপরাধের শতকোটি চিহ্ন সর্বাঙ্গে মাখিয়া বিচারের সুমুখে দাড়াইয়া, আজ কি করিয়া সে মুখে আনিবে, অপরাধ করাই তাহার পেশা বটে, কিন্তু এবার সে নির্দোষ। যতই বিলম্ব হইতে লাগিল, ততই সে বুঝিতে লাগিল, বিচারক তাহার ফাঁসির হুকুম দিতে বসিয়াছে, কিন্তু কি করিয়া সে রােধ করিবে ? সত্য অধীর হইয়া উঠিয়াছিল ; সে বলিল, চললুম। বিজলী তবুও মুখ তুলিতে পারিল না, কিন্তু এবার কথা কহিল। বলিল, যাও কিন্তু যে কথা অপরাধে মগ্ন থেকেও আমি বিশ্বাস করি, সে কথা অবিশ্বাস করে যেন তুমি অপরাধী হয় না। বিশ্বাস করাে, ১১