পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

‘সমাজ’ বলিয়া যাহাকে জানে, তাহার উপরেই নির্ভয়ে ভর দেওয়া চলে—পণ্ডিতের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যাটির উপরে চলে না। অন্ততঃ আমি বােঝাপড়া করিতে চাই এই মােটা বস্তুটিকে লইয়াই। যে সমাজ মড়া মরিলে কঁধ দিতে আসে, আবার শ্রাদ্ধের সময় দলাদলি পাকায় ; বিবাহে যে ঘটকালি করিয়া দেয়, অথচ বউভাতে হয়ত বাঁকিয়া বসে ; কাজকর্মে, হাতে-পায়ে ধরিয়া যাহার ক্রোধ শান্তি করিতে হয়, উৎসবেব্যসনে যে সাহায্যও করে, বিবাদও করে ; যে সহস্ৰ দোষত্রুটি সত্ত্বেও পূজনীয় –আমি তাহাকেই সমাজ বলিতেছি এবং এই সমাজ যদ্বারা শাসিত হয়, সেই বস্তুটিকেই সমাজ-ধর্ম বলিয়া নির্দেশ করিতেছি। তবে, এইখানে বলিয়া রাখা আবশ্যক, যে ধর্ম নির্বিশেষে সকল দেশের, সকল জাতির সমাজকে শাসন করে, সেই সামাজিক ধর্মের আলােচনা করা আমার প্রবন্ধের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। কারণ, মানুষ মােটের উপর মানুষই। তাহার সুখ-দুঃখ আচার ব্যবহারের ধারা সর্বদেশেই একদিকে চলে। মড়া মরিলে সব দেশেই প্রতিবেশীরা সৎকার করিতে জড় হয়; বিবাহে সর্বত্রই আনন্দ করিতে আসে; বাপ-মা সব দেশেই সন্তানের পূজ্য ; বয়ােবৃদ্ধের সম্মাননা সব দেশেরই নিয়ম; স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধ প্রায়ই একরূপ; আতিথ্য সর্বদেশেই গৃহস্থের ধর্ম। প্রভেদ শুধু খুটিনাটিতে। মৃতদেহ কেহ-বা গৃহ হইতে গাড়ি-পালকি করিয়া, ফুলের মালায় আবৃত করিয়া গােরস্থানে লইয়া যায়, কেহ-বা ছেড়া মাদুরে জড়াইয়া, বংশখণ্ডে বিচালির দড়ি দিয়া বাঁধিয়া, গােবরজলের সৌগন্ধ ছড়াইয়া বুলাইতে ঝুলাইতে লইয়া চলে ; বিবাহ করিতে কোথাও-বা বরকে তরবারি প্রভৃতি পাঁচ হাতিয়ার বাঁধিয়া যাইতে হয়, আর কোথাও জাতিটি হাতে করিয়া গেলেই পাঁচ হাতিয়ারের কাজ হইতেছে মনে করা হয়। বস্তুতঃ এইসব ছােট জিনিস লইয়াই মানুষে মানুষে বাদ-বিতণ্ডা কলহ-বিবাদ। এবং যাহা বড়, প্রশস্ত, সমাজে বাস করিবার পক্ষে যাহা একান্ত প্রয়ােজনীয়, সে সম্বন্ধে কাহারও মতভেদ ৪২