পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

আমাদের কি সম্পদ দান করিয়াছে, সে তর্ক তুলিয়া নয়, কি বিপদ হইতে রক্ষা করিয়া আসিয়াছে, শুধু সেই আলােচনা করিয়া সমাজের দোষগুণ বিচার করা উচিত। অতএব, আজও যদি আমাদের ঐ মনুপরাশরের সংস্কার করাই আবশ্যক হইয়া থাকে, তবে ঐ ধারা ধরিয়াই করা চাই। স্বৰ্গই হউক আর মােক্ষই হউক, সে কি দিতেছে, সে বিচার করিয়া নয়, বরঞ্চ সব বিপদ হইতে আজ আর সে আমাদিগকে রক্ষা করিতে পারিতেছে না, শুধু সেই বিচার করিয়া । সুতরাং, হিন্দু যখন উপর দিকে চাহিয়া বলেন, ঐ দেখ আমাদের ধর্মশাস্ত্র স্বর্গের কবাট সােজা খুলিয়া দিয়াছেন, আমি তখন বলি—সেটা না হয় পরে দেখিয়ে, কিন্তু আপাততঃ নীচের দিকে চাহিয়া দেখ, নরকে পড়িবার দুয়ারটা সম্প্রতি বন্ধ করা হইয়াছে কি না। কারণ, এটা ওটার চেয়েও আবশ্যক। সহস্র বর্ষ পূর্বে হিন্দুশাস্ত্র স্বর্গপ্রবেশের যে সােজা পথটি আবিষ্কার করিয়াছিলেন, সে পথটি আজও নিশ্চয় তেমনই আছে। সেখানে পৌছিয়া একদিন সেইরূপ আমােদ উপভােগ করিবার আশা বেশী কথা নয়—কিন্তু, নানাপ্রকার বিজাতীয় সভ্যতা অসভ্যতার সংঘর্ষে ইতিমধ্যে নীচে পড়িয়া পিষিয়া মরিবার যে নিত্য নূতন পথ খুলিয়া যাইতেছে, সেগুলি ঠেকাইবার কোনরূপ বিধি-ব্যবস্থা শাস্ত্রগ্রন্থে আছে কি না, সম্প্রতি তাহাই খুঁজিয়। দেখ । যদি না থাকে, প্রস্তুত কর ; তাহাতেও দোষ নাই ; বিপদে রক্ষা করাই ত আইনের কাজ। কিন্তু উদ্দেশ্য ও আবশ্যক যত বড় হউক, প্রস্তুত’ শব্দটা শুনিবামাত্রই হয়ত পণ্ডিতদের দল চেঁচাইয়া উঠিবেন। আরে এ বলে কি! এ কি যারতার শাস্ত্র যে, আবশ্যকমত দুটো কথা বানাইয়া লইব? এ যে হিন্দুর শাস্ত্রগ্রন্থ। অপৌরুষেয়—অন্ততঃ ঋষিদের তৈরি, যারা ভগবানের কৃপায় ভূত-ভবিষ্যত সমস্ত জানিয়া শুনিয়া লিখিয়া গিয়াছেন। কিন্তু এ কথা তারা স্মরণ করেন না যে, এটা শুধু হিন্দুর উপরেই ভগবানের দয়া নয়—এমনি দয়া সব জাতির প্রতিই তিনি করিয়া গিয়াছেন। ৪৯ আঁধারে আলাে