পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

কোন জিনিসের ইচ্ছামত ব্যাখ্যা করা যায় তিন প্রকারে। প্রথম ব্যাকরণগত ধাতুপ্রত্যয়ের জোরে ; দ্বিতীয়-পূর্ব এবং পরবর্তী শ্লোকের সহিত তাহার সম্বন্ধ বিচার করিয়া ; এবং তৃতীয় কোন বিশেষ দুঃখ দূর করিবার অভিপ্রায়ে শ্লোকটি সৃষ্ট হইয়াছিল, তাহার ঐতিহাসিক তথ্য নির্ণয় করিয়া। অর্থাৎ চেষ্টা করিলেই দেখা যায় যে, চিরদিন সমাজ-পরিচালকেরা নিজেদের হাতে এই তিনখানি হাতিয়ার ব্যাকরণ, সম্বন্ধ এবং তাৎপর্য ( positive and negative) লইয়া ঈশ্বরদত্ত যে-কোন শাস্ত্রীয় শ্লোকের যে-কোন অর্থ করিয়া পরবর্তী যুগের নিত্য নূতন সামাজিক প্রয়ােজন ও তাহার ঋণ পরিশােধ করিয়া তাহাকে সজীব রাখিয়া আসিয়াছেন। আজ যদি আমাদের জাতীয় ইতিহাস থাকিত, তাহা হইলে নিশ্চয় দেখিতে পাইতাম—কেন শাস্ত্রীয় বিধি-ব্যবস্থা এমন করিয়া পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে এবং কেনই বা এত মুনির এত রকম মত প্রচলিত হইয়াছে এবং কেনই বা প্রক্ষিপ্ত শ্লোকে শাস্ত্র বােঝাই হইয়া গিয়াছে। সমাজের এই ধারাবাহিক ইতিহাস নাই বলিয়াই এখন আমরা ধরিতে পারি না—অমুক শাস্ত্রের অমুক বিধি কিজন্য প্রবর্তিত হইয়াছিল এবং কিজন্যই বা অমুক শাস্ত্রের দ্বারা তাহাই বাধিত হইয়াছিল। আজ সুদুরে দাড়াইয়া সবগুলি আমাদের চোখে এইরূপ দেখায়। কিন্তু, যদি তাহাদের নিকটে যাইয়া দেখিবার কোন পথ থাকিত ত নিশ্চয় দেখিতে পাইতাম—এই দুটি পরস্পর-বিরুদ্ধ বিধি একই স্থানে দাড়াইয়া আঁচড়া-আঁচড় করিতেছে না। একটি হয়ত আর-একটির শতবর্ষ পিছনে দাড়াইয়া ঠোটে আঙুল দিয়া নিঃশব্দে হাসিতেছে। প্রবাহই জীবন। মানুষ যতক্ষণ বাঁচিয়া থাকে, ততক্ষণ একটা ধারা তাহার ভিতর দিয়া অনুক্ষণ বহিয়া যাইতে থাকে। বাহিরের প্রয়ােজনীয়-অপ্রয়ােজনীয় যাবতীয় বস্তুকে সে গ্রহণও করে, আবার ত্যাগও করে। যাহাতে তাহার আবশ্যক নাই, যে বস্তু দূষিত, তাহাকে ९२