পাতা:আধাঁরে আলো - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

বরঞ্চ, যাহাদের শাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তা নাই, শুধু তাহাদেরই এই ভয় হয়, পাছে দুই-একটা কথাও প্রক্ষিপ্ত বলিয়া ধরা পড়িলে সমস্ত বস্তুটাই ঝুটা হইয়া ছায়াবাজির মত মিলাইয়া যায়। সুতরাং যাহা কিছু সংস্কৃত শ্লোকের আকারে ইহাতে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে তাহার সমস্তটাই হিন্দুশাস্ত্র বলিয়া মানা চাই-ই। | বস্তুতঃ এই সত্য ও স্বাধীন বিচার হইতে ভ্রষ্ট হইয়াই হিন্দুর শাস্ত্ররাশি এমন অধঃপতিত হইয়াছে। নিছক নিজের বা দলটির সুবিধার জন্য কত যে রাশি রাশি মিথ্যা উপন্যাস রচিত এবং অনুপ্রবিষ্ট হইয়া হিন্দুর শাস্ত্র ও সমাজকে ভারাক্রান্ত করিয়াছে, কত অসত্য যে বেনামীতে প্রাচীনতার ছাপ মাখিয়া ভগবানের অনুশাসন বলিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে, তাহার সীমা পরিসীমা নাই। জিজ্ঞাসা করি, ইহাকে মান্য করাও কি হিন্দুশাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা করা? একটা দৃষ্টান্ত দিয়া বলি। কুলাবের “আমিষাসবসৌরভ্যহীনং যস্য মুখং ভবেৎ। প্রায়শ্চিত্তী স বজ্জাশ্চ পশুরেব ন সংশয়ঃ” ইহাও হিন্দুর শাস্ত্র। এ কথাও ভগবান মহাদেব বলিয়া দিয়াছেন। চব্বিশ ঘণ্টা মুখে মদ-মাংসের সুগন্ধ না থাকিলে সে একটা অন্ত্যজ জাননায়ারের সামিল। অধিকারিভেদে এই শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানের দ্বারাও হিন্দ, স্বর্গের আশা করে। কিন্তু তান্ত্রিকই হউক, আর যাই হউক, সে হিন্দু ত বটে। ইহা শাস্ত্রীয় বিধি ত বটে! সুতরাং স্বর্গবাসও ত সুনিশ্চিত বটে! কিন্তু, তবুও যদি কোন পাশ্চাত্য পণ্ডিত humbug বলিয়া হাসিয়া উঠেন, তঁাহার হাসি থামাইবারও ত কোন সদুপায় দেখিতে পাওয়া যায় না। অথচ হিন্দর ঘরে জন্মিয়া শ্লোকটিকে মিথ্যা বলাতেও শঙ্কা আছে। কারণ, আর দশটা হিন্দুশাস্ত্র হইতে হয়ত বচন বাহির হইয়া পড়িবে যে, মহেশ্বরের তৈরী এই শ্লোকটিকে যদি কেহ সন্দেহ করে, তাহা হইলে সে ত সে, তাহার ৫৬ পুরুষ নরকে যাইবে। আমাদের হিন্দুশাস্ত্র ত সচরাচর একপুরুষ লইয়া বড়-একটা কথা কহে না!