পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আর্যগাথা
১১৯

পারে না। না হইবারই কথা, কারণ এই কবিতাটি কিঞ্চিৎ বৃহৎ এবং বিচিত্র, এবং আমাদের সংগীত সাধারণত একটিমাত্র সংক্ষিপ্ত স্থায়ী ভাব অবলম্বন করিয়া আত্মপ্রকাশ করে, ভাব হইতে ভাবান্তরে বিচিত্র আকারে ও নব নব ভঙ্গিতে অভিব্যক্ত হইয়া উঠে না। এইজন্য আমাদের বক্ষ্যমাণ কবিতাটির উপযুক্ত রাগিণী আমরা সহজে প্রত্যাশা করিতে পারি না। কিন্তু কোনো সুর না থাকিলেও ইহাকে আমরা গান বলিব- কারণ, ইহাতে আমাদের মনের মধ্যে গানের একটা আকাঙ্ক্ষা রাখিয়া দেয়, যেমন ছবিতে একটা নিঝরিণী আঁকা দেখিলে তাহার গতিটি আমরা মনের ভিতর হইতে পূরণ করিয়া লই। গান এবং কবিতার প্রভেদ আমরা এই গ্রন্থ হইতেই তুলনার দ্বারা দেখাইয়া দিতে পারি।—

সে কে?— এ জগতে কেহ আছে, অতি উচ্চ মোর কাছে
   যার প্রতি তুচ্ছ অভিলাষ;
সে কে?—অধীন হইয়ে, তবু রহে যে আমার প্রভু,
   প্রভু হয়ে আমি যার দাস;
সে কে?—দূর হতে দুরাত্মীয়, প্রিয়তম হতে প্রিয়,
   আপন হইতে যে আপন।
সে কে?—লতা হতে ক্ষীণ তারে  বাঁধে দৃঢ় যে আমারে,
   ছাড়াতে পারি না আজীবন;
সে কে?— দুর্বলতা যার বল; মর্মভেদী অশ্রুজল।
   প্রেম-উচ্চারিত রোষ যার;
সে কে?— যার পরিতোষ মম সফল জনম-সম,
   সুখ সিদ্ধি সব সাধনার;
সে কে?—হলেও কঠিন চিত শিশুসম স্নেহভীত
   যার কাছে পড়ি গিয়া মুয়ে;