পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
আধুনিক সাহিত্য

 কথাটা সত্য বটে, কিন্তু তথাপি ইহা তর্কমাত্র। আমাদের ভাষা আমাদের মনকে এক-দম ছাড়াইয়া যাইতে পারে না এবং আমাদের মন সীমাবদ্ধ। সুতরাং আমাদের ভাষা আপেক্ষিক। আমরা যাহাকে তীক্ষ্ণ বলি অনুবীক্ষণ দিয়া দেখিতে গেলে তাহা ভোতা হইয়া পড়ে, আমরা যাহাকে নিটোল গোল বলি তাহাকে সহস্রগুণ বাড়াইয়া দেখিলে তাহার অসমানতা ধরা পড়িয়া যায়। অণুবীক্ষণ দিয়া দেখিতে গেলে নিরাকার উপাসনার মধ্যে যে আকারের আভাস পাওয়া যায় না তাহা বলিতে সাহস করি না।

 তাই যদি হইল, তবে আমরা যাহাকে সাকার-উপাসনা বলি তাহাতেই বা দোষ কী? নিরাকার যখন পূর্ণভাবে মনের অগম্য তখন তাঁহাকে সুগম আকারে পূজা করাই ভালো।

 আকার আমাদের মনের পক্ষে সুগম হইতে পারে, কিন্তু, তাই বলিয়া নিরাকার যে আকারের দ্বারা সুগম হইতে পারেন তাহা নহে—ঠিক তাহার উল্টা। মনে করো, আমি সমুদ্রের ধারণা করিতে ইচ্ছা করি। সমুদ্র ক্রোশ দুই তফাতে আছে। আমি তাহা দেখিতে যাত্রা করিবার সময় পণ্ডিত আসিয়া বলিলেন, ‘সমুদ্র এতই বড়ো যে স্বচক্ষে দেখিয়া তাহার ধারণা হইতে পারে না, কারণ আমাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ— আমরা সমুদ্রের মধ্যে যতই দূরে যাই, যতই প্রয়াস পাই, সমুদ্রকে ছোটো করিয়া দেখা ছাড়া উপায়ই নাই। অতএব, তোমার অন্দরের মধ্যে একটি ছোটো ভোবা খুড়িয়া তাহাকে সমুদ্র বলিয়া কল্পনা করো।’

 কিন্তু দর্শনশক্তির সাধ্যসীমা-দ্বারা সমুদ্র দেখিয়াও যদি সমুদ্রের ধারণা সম্পূর্ণ না হয় তবে ডোবা হইতে সমুদ্রের ধারণা অসম্ভব বলিলেও হয়। অনন্ত আকাশ আমাদের কাছে মণ্ডলবদ্ধ, কিন্তু তাই বলিয়া ঘরে