পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জুবেয়ার
১৫৫

জন্মাইতে পারে না, কিন্তু জমির উপরিভাগে যে সার ঢালা থাকে সেইখান হইতেই তাহার শস্য উঠে।’

 আমাদের কথা মনে পড়ে। আজকাল আমাদের দ্বারা যাহা উৎপন্ন হইতেছে সে কি যথার্থ আমাদের মনের ভিতর হইতে— না, ইংরাজি য়ুনিবার্সিটি গাড়ি বোঝাই করিয়া আমাদের প্রকৃতির উপরিভাগে যে সার বিছাইয়া দিয়াছে সেইখান হইতে। এ সম্বন্ধে তর্ক তুলিতে বিরোধের সৃষ্টি হইতে পারে, অতএব মূক থাকাই ভালো।


সমালোচনা সম্বন্ধে জুবেয়ারের কতকগুলি মত নিয়ে অনুবাদ করিয়া দিতেছি—

 ‘পূর্বে যাহা সুখ দেয় নাই তাহাকে সুখকর করিয়া তোলা একপ্রকার নূতন সৃজন।’ এই সৃজনশক্তি সমালোচকের।

 ‘লেখকের মনের সহিত পরিচয় করাইয়া দেওয়াই সমালোচনার সৌন্দর্য। লেখায় বিশুদ্ধ নিয়ম রক্ষা হইয়াছে কি না তাহারই খবরদারি করা তাহার ব্যাবসাগত কাজ বটে, কিন্তু সেইটেই সব চেয়ে কম দরকারি।

 ‘অকরুণ সমালোচনায় রুচিকে পীড়িত করে এবং সকল দ্রব্যের স্বাদে বিষ মিশাইয়া দেয়।

 ‘যেখানে সৌজন্য এবং শান্তি নাই সেখানে প্রকৃত সাহিত্যই নাই। সমালোচনার মধ্যেও দাক্ষিণ্য থাকা উচিত; না থাকিলে তাহা যথার্থ সাহিত্যশ্রেণীতে গণ্য হইতে পারে না।

 ‘ব্যাবসাদার সমালোচকরা আকাটা হীরা বা খনি হইতে তোলা সোনার ঠিক দর যাচাই করিতে পারে না। ট্যাঁকশালের চলতি টাকাপয়সা লইয়াই তাহাদের কারবার। তাহাদের সমালোচনায় দাঁড়িপাল্লা আছে, কিন্তু নিকষ-পাথর অথবা সোনা গলাইয়া দেখিবার মুচি নাই।