পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
আধুনিক সাহিত্য

 এই মানসীরূপিণী সাধনার ধনকে পরিপূর্ণরূপে লাভ করিবার জন্য কাতরতা প্রকাশ করিয়া কবি প্রথম সর্গ সমাপ্ত করিয়াছেন।

 তাহার পর-সর্গ হইতে প্রেমিকের ব্যাকুলতা। কখনো অভিমান কখনো বিরহ, কখনো আনন্দ কখনো বেদনা, কখনো ভৎসনা কখনো স্তব। দেবী কবির প্রণয়িনী-রূপে উদিত হইয়া বিচিত্র সুখদুঃখে শতধারে সংগীত উচ্ছ্বসিত করিয়া তুলিতেছেন। কবি কখনো তাহাকে পাইতেছেন কখনো তাহাকে হারাইতেছেন, কখনো তাহার অভয়রূপ কখনো তাহার সংহারমূর্তি দেখিতেছেন। কখনো তিনি অভিমানিনী, কখনো বিষাদিনী, কখনো আনন্দময়ী। কবি বিষাদিনীকে বলিতেছেন—

‘অয়ি, এ কী, কেন কেন,
বিষন্ন হইলে হেন?
আনত আননশশী, আনত নয়ন,
অধরে মন্থরে আসি
কপােলে মিলায় হাসি,
থরথর ওষ্ঠাধর, স্ফোরে না বচন!
তেমন অরুণরেখা
কেন কুহেলিকা-ঢাকা,
প্রভাতপ্রতিমা আজি কেন গাে মলিন!
বলো বলো চন্দ্রাননে,
কে ব্যথা দিয়েছে মনে,
কে এমন—কে এমন হৃদয়বিহীন!
বুঝিলাম অনুমানে,
করুণাকটাক্ষদানে
চাবে না আমার পানে, ক’বেও না কথা।